ইংলিশ কিংবা স্প্যানিশ, ফিলিপিনো কিংবা জার্মান। ভাষা ভিন্ন হলেও সবার স্লোগান এক, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা।
রাত পোহালেই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের দুই বছর। মধ্যপ্রাচ্যে সারাবছর চলা যুদ্ধ বন্ধে পুরোপুরি ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনের সংখ্যা ৪২ হাজার ছুঁইছুঁই। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭০০ মানুষ। তাই যুদ্ধের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে শনিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান শহর দখলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছি। কারণ সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া গণহত্যার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’
আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে হবে। মার্কিন অর্থ ও অস্ত্রের কারণেই নিরীহ ফিলিস্তিনিরা প্রাণ হারাচ্ছেন।’
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মধ্যে লন্ডনের বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড়। শনিবার যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। এতে যোগ দেন হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা ইহুদি ও তাদের স্বজনরা। এসময় ইসরাইলকে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধে আহ্বান জানানো হয় ব্রিটিশ সরকারের প্রতি।
লন্ডনের বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘আমাদের সকলের সৎ ইচ্ছা সত্ত্বেও ইসরাইলি সরকার আমাদের মতকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। তারা গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।’
আরেকজন বলেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও পুরো বিশ্বে শান্তি চাই। প্রতিদিন, প্রতিমাসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছি। কিন্তু আপনারা বধির, বোবা ও অন্ধ। তাই শুনছেন না।’
হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও মাথায় কিফায়া পরিধান করে ওয়াশিংটন ডিসি ও নিউইয়র্ক সিটি শহরে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থকও এদিন যোগ দেন বিক্ষোভে। হাতে উচিয়ে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলো আজীবন ডেমোক্র্যাট হলেও গণহত্যার সমর্থক না। মার্কিন সরকারের নীতিতে পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ডাক দিচ্ছেন না। তাই আমরা বয়কট করতে থাকবো। পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
আরেকজন বলেন, ‘সবাই রাস্তায় নেমেছে কারণ ইসরাইল ও বাইডেন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে সকলেই ক্ষুব্ধ।’
কয়েকহাজার যুদ্ধবিরোধী মানুষের স্লোগানে মুখর ছিলো প্যারিস, মাদ্রিদ, ম্যানিলা, কেপটাউন, টরেন্টো ও সানটিয়াগোসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহর। হাতে ফিলিস্তিনের পাশাপাশি শোভা পায় লেবাননের পতাকা। প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে ড্রাম, গিটার, ট্রাম্পেট এমনকি পিয়ানো ব্যবহার করেন অনেকে।
মিছিলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় রোমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এসময় ব্যবহার করা হয় জলকামান, নিক্ষেপ করা হয় টিয়ারশেল। পুলিশকে লক্ষ্য করে কাঁচের বোতল ও পাথর ছোঁড়েন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে মিথ্যাবাদী ও স্বৈরাচার আখ্যা দিয়েছেন অনেকে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।