অস্বাভাবিক ভারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত এশিয়া। মহাদেশটির উত্তর ও দক্ষিণাংশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যেও আকস্মিক বন্যা দেখা গেছে। গেলো কয়েকদিনের বন্যায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এপ্রিলে রাশিয়া থেকে প্রথম বন্যার খবর আসে। তাপদাহের কারণে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে গলতে শুরু করে বরফ। পাশাপাশি ভারি বৃষ্টিতে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম উরাল নদীর পানির স্তর বাড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে বাঁধ ভেঙে ওরেনবার্গ ও কুরগান অঞ্চল তলিয়ে যায়। ইতোমধ্যে ৩৫ হাজারের বেশি স্থাপনা প্লাবিত হয়েছে।
উরাল নদীর গন্তব্যস্থল রাশিয়া থেকে কাজাখস্তান হয়ে কাস্পিয়ান সাগরে। তাই প্রতিবেশি দেশ কাজাখস্তানেও বন্যা দেখা গেছে। ১০টি রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের দাবি, ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এটি। ইতোমধ্যে এক লাখের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গেলো তিন দিনে পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি, বন্যা ও বজ্রপাতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। বন্যার জলে অসংখ্য বাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। আর কোয়েটায় জরুরি সতর্কতা জারি করেছে বালুচিস্তানের প্রদেশিক সরকার।
স্থানীয়রা বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ তার সম্পদ, এমনকি জীবনও হারাচ্ছে। সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিন বালুচিস্তানের পাশাপাশি দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হবে। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। নিয়মিত জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি প্রদেশের সঙ্গে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছি। যেখানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেখানে দ্রুত ত্রাণ পাঠাতে হবে।’
এছাড়া আকস্মিক বন্যায় গেলো তিন দিনে আফগানিস্তানে ৬ শতাধিক স্থাপনা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে প্রাণহানি। দেশটির ৩৪টির মধ্যে ২০টি প্রদেশেই ভারি বৃষ্টি হয়েছে। কান্দাহারের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির শিকার ফারাহ, হেরাত ও জাবুল প্রদেশ। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দেশটির দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
রোববার থেকে ভারি বৃষ্টিতে ওমানে দেখা গেছে বন্যা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত সাড়ে ৩শ' মিলিমিটার। শুধু সোমবারই কয়েকটি অঞ্চলে ১শ' মিলিমটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকস্মিক এই বন্যায় হতাহতের বেশিরভাগই গাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন। সামাদ আল শান এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আবারও তাপদাহ ফিরে এসেছে। ভিয়েতনামে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। পারদ ৪২ ডিগ্রি ছাড়ানোয় ফিলিপাইনে কয়েকশ' শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ১৩ মাস ধরে তাপমাত্রার রেকর্ড থাইল্যান্ডে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখতে না পারলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বিশ্ববাসীকে।