আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

ইলন মাস্কের নতুন দপ্তরের মাধ্যমে চাকরি হারানোর শঙ্কায় লক্ষাধিক সরকারি কর্মী

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দপ্তর-ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিতে ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দেয়ার পর বিভিন্ন দপ্তরের লক্ষাধিক চাকরিজীবী তাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেসলা ও এক্স থেকে হাজারো কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য আগে থেকেই বেশ সমালোচিত ইলন মাস্ক। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে অহেতুক ব্যয় কমিয়ে আনা ও সরকারি অপচয় রোধে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে ইলন মাস্কের ডিপার্টমেন্টের।

হোয়াইট হাউজে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে সমর্থন করেছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের কর্ণধার ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের প্রচারণায় ব্যয় করেছেন প্রায় ২০ কোটি ডলার। এর মধ্যে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত দোদুল্যমান ৭টি অঙ্গরাজ্যে প্রতিদিন লটারির মাধ্যমে একজন ভোটারকে ১০ লাখ ডলার পুরস্কার দিয়ে বেশ সমালোচিতও হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী ব্যক্তি।

কাড়িকাড়ি অর্থ ঢালা ছাড়াও নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সকেও প্রচারণার শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের মতো ধনী ব্যবসায়ীকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন মাস্ক, তারচেয়েও কয়েকগুণ বেড়েছে তার অর্থ-সম্পদ। ফুলে ফেঁপে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্লুমবার্গের তথ্য বলছে, ট্রাম্পের জয়ের দিন থেকে এখন পর্যন্ত মাস্কের সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি।

এরই মধ্যে নির্বাচনী অঙ্গীকার রক্ষায় ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি নামে নতুন একটি দপ্তর খুলে ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দিয়েছেন নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই বিভাগটি সামলাতে ইলন মাস্কের সঙ্গে থাকছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবেক রামাস্বামী। তিনিও একজন বিনিয়োগকারী ও প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত।

ট্রাম্প প্রশাসনে ইলন মাস্কের কাজের পরিধি কতটা বিস্তৃত হবে সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী করতে কতটা গুরুত্ব রাখবে নতুন এই দপ্তরটি, তাও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের দেয়া বিবৃতির তথ্য বলছে, অহেতুক ব্যয় কমিয়ে আনা, সরকারি অপচয় রোধ ও কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরগুলোর পুনর্গঠনের পথকে প্রশস্ত করাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। যা করার জন্য সিনেটের অনুমোদনেরও প্রয়োজন হবে মাস্ক-রামাস্বামীর দপ্তরের।

এই খাতে মাস্কের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কও দেখা দিয়েছে, কারণ তার পরিচালিত টেসলা এবং স্পেসএক্স কোম্পানির সঙ্গে মার্কিন সরকারের বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে। এছাড়া ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন থেকে তিনি সুবিধা পেয়ে আসছেন। অথচ ইলন মাস্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, তার বিভাগ সরকারের অপচয় রোধে একটি শকওয়েভ সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ সরকারি অপচয়ের সঙ্গে জড়িত, যে কারোর জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হতে চলেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিবিসি, সিএনএনসহ প্রথম সারির পশ্চিমা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে শঙ্কা করছে যে, ইলন মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি'র আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১ লাখ বা তারও বেশিসংখ্যক সরকারি চাকরিজীবী তাদের চাকরি হারাতে পারেন। কর্মী ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিতে থাকা সরকারি বিভাগ ও দপ্তরগুলো হলো- শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর, এফবিআই, পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কমিশন, খাদ্য ও পুষ্টি পরিষেবা দপ্তর, অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ব্যুরোসহ আরও বেশ কয়েকটি দপ্তর।

এদিকে নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেসলা ও এক্স থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য আগে থেকেই বেশ আলোচিত-সমালোচিত ইলন মাস্ক। গত দুই বছরে এই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাইও করেছেন তিনি। তাই সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কাটা এখন সবচেয়ে বেশি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির আওতায় যাবতীয় লক্ষ্য অর্জনে ২০২৬ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত ইলন মাস্ককে সময় বেধে দিয়েছেন ট্রাম্প।

এএম