লন্ডনের দক্ষিণে শপিং স্ট্রিট আর আবাসিক এলাকাগুলোতে এককালের পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে প্রাণ ফিরেছে। আগে স্কুল ছিল, এমন ভবনের দেয়ালে লেগেছে নতুন রঙের প্রলেপ। জিমনেশিয়াম রূপ নিয়েছে ডরমেটরিতে। আবাসন খাতে সংকটের মুখে গৃহহীন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে এভাবেই অব্যবহৃত বাণিজ্যিক স্থাপনাকে কাজে লাগাচ্ছে রিক্লেইম ক্রয়ডন কালেক্টিভ নামের একটি সংস্থা।
ইংল্যান্ড লন্ডনের রিক্লেইম ক্রয়ডনের সদস্য অ্যালেক্স বলেন, ‘এই ভবনটি ২৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত। শেষবার ২৫ বছর আগে একটি সলিসিটরস কোম্পানি এখানে কাজ করতো। প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব নেই এখন। পাঁচ মাস ধরে ভবনটি মানুষের বসবাসের জন্য ব্যবহার করছি আমরা।’
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সরকারের আবাসন ও কল্যাণ ভাতা থেকে ছিটকে পড়েছেন অনেক ব্রিটিশ। বাড়িভাড়া ঊর্ধ্বমুখী বলে রাস্তায় রাত কাটানো মানুষের আকুতি বাড়ছে, অব্যবহৃত ও খালি পড়ে থাকা ভবনগুলোকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য। ইংল্যান্ডে খালি পড়ে থাকা প্রায় সাত লাখ বাড়ি ব্যবহারযোগ্য করে তোলার দাবি আবাসনকর্মীদেরও। ব্রিটিশ বাড়ি মালিক সমিতির তথ্য, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে যুক্তরাজ্যে পরিত্যক্ত বাণিজ্যিক ভবনে বসবাসের হার বেড়েছে ৩শ' শতাংশ।
অ্যাকশন অন এম্পটি হোমসের ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ক্রিস বেইলি বলেন, ‘শেষবার খালি বাড়ি কর্মসূচির সময় পরিত্যক্ত বাড়ি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার খরচ গড়ে ছিল ২৫ হাজার পাউন্ড। সম্প্রতি কিছু হিসাব করেছি আমরা। এতে দেখা গেছে, বর্তমানে বাড়িপ্রতি ৩৫ হাজার পাউন্ড খরচ করলে প্রায় ৪০ হাজার ভবন দ্রুত বসবাসযোগ্য করা সম্ভব। এটা সত্যিই বড় অঙ্ক।’
যুক্তরাজ্যে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল আবাসন ব্যবস্থার সংকট নতুন নয়। গেল পাঁচ বছরে ইংল্যান্ডে বেসরকারি বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানী লন্ডনেই গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ১৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে এবং অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকছেন পৌনে দুই লাখ মানুষ। লন্ডন কাউন্সিলের তথ্যমতে, গেল বছর হোটেল-হোস্টেল বা বাড়িসহ অস্থায়ী আবাসনে মাসিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতেই লড়াই করছেন অনেক মানুষ।
গৃহহীনদের একজন বলেন, ‘আমি হোস্টেলে থাকছি। খুব ছোট্ট একটা কক্ষে, তাও দুই সন্তানসহ। থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা তো নেই, স্বাস্থ্যকরও নয়।’
সরকারের ব্যয় সংকোচনে মানসিক স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেবায় চলছে ব্যাপক কাটছাঁট, যার জেরে জীবন হয়ে পড়েছে আরও কঠিন। সবচেয়ে করুণ অবস্থা গৃহহীন মানুষের, যাদের বেশিরভাগ আদিবাসী সংখ্যালঘু ও কৃষ্ণাঙ্গ। ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইংল্যান্ডে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী তিনগুণ বেশি আশ্রয়হীন।
এক যুগের বেশি সময় পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সদ্য ক্ষমতায় আসা লেবার পার্টি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে ১৫ লাখ বাড়ি নির্মাণের।