নড়াইলের আলাদাৎপুরের বাসিন্দা সৈয়দ মাহমুদ হাসান। কলেজ পড়াকালীন বাবার অকাল মৃত্যুতে সংসার চালানোর গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা তার। এ অবস্থায় ২০১২ সালে কম্পিউটার কিনে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।
দুই মাস পর থেকেই আয় আসতে শুরু করে। ২০১৪ সাল থেকে প্রতি মাসে আয় দাঁড়ায় লাখ টাকার বেশি। এই অর্থ দিয়েই নিজের লেখাপড়া শেষ করার পাশাপাশি সংসার চালিয়ে নড়াইল শহরে নির্মাণ করেছেন ৩ তলা বাড়ি। বর্তমানে তার প্রতি মাসে আয় দেড় থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। গত ১০ বছরে সফল এই ফ্রিল্যান্সার আয় করেছেন কয়েক কোটি টাকা।
তিনি বলেন, 'কেউ যদি শুরুটা ভালো করতে পারে তাহলে তার আর কোন সমস্যা হয় না। কারণ মার্কেট এমনভাবে তৈরি করা একটা কাজ করলে অন্য সবাই দেখতে পারে।'
আরেক সফল ফ্রিল্যান্সার সাদ্দাম হোসেন। তার অর্জনটাও সহজ ছিলো না। সংসার চালাতে একসময় কাজের সন্ধানে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটেছেন। তবে ফ্রিল্যান্সিং করে বর্তমানে তার আয় প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এই কাজ করে কয়েক বছরে আয় করেছে অন্তত ৪ কোটি টাকা। জমি কিনে বাড়িও নির্মাণ করেছেন ।
সাদ্দাম এখন টেলিভিশনকে বলেন, 'অনলাইনের মার্কেটপ্লেস, কন্টেন্ট ক্রিয়েট আবার অফলাইন থেকেও বেশ ভালো উপার্জন করছি। অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হওয়ার ফলে মার্কেটের বাইরেও কাজ পাই।'
শুধু সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও সাদ্দাম হোসেনই নয় ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হয়েছে জেলার অন্তত অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। আর বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন আরও প্রায় দেড় হাজার। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিমাসে নড়াইলে রেমিট্যান্স আসছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা।
ফ্রিল্যান্সিং করে আয়ের পাশাপাশি এ বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস নেন কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সার। সরাসরি ও অনলাইনে ক্লাস করেন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। শুধু চাকরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে তরুণ প্রজন্মকে অনলাইনভিত্তিক কাজে যুক্ত হবার আহ্বান সফল ফ্রিল্যান্সারদের।
তারা বলেন, 'এই কাজটা ঘরে বসে করা যায়। যে যত বেশি কাজ করবে তার উপার্জনও তত বেশি হবে। অবশ্যই ধৈর্য থাকতে হবে।'
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, 'যারা বেকার অবস্থায় আছে তারা আমাদের টিটিসি বা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে পারে।'