সিরাজগঞ্জ প্রাণ-প্রকৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁত শিল্প। তাঁত শিল্পে ডায়িং ও প্রসেসিংয়ে রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। জেলায় আশঙ্কাজনকহারে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বাড়ছে।
সুতার রং থেকে শুরু করে বেশ কিছু কাজে ব্যবহার হয় রাসায়নিক। যার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাঁত কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য মিশছে মাটি ও পানিতে। দূষিত পানি পান ও ব্যবহারের কারণে স্থানীয়রা নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলেন, 'বাচ্চারে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইসি, 'বহুত জায়গায় নিয়া ঘুরসি আর ঝারফুকও দিসি। কোন জায়গায় সমাধান দিতে পারে নাই। বর্তমান চলাফেরা খুব কষ্ট।'
গবেষণাও বলছে পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর জন্ম হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো'র তথ্যমতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে এমন শিশুর সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৪৮৮ জন।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেলের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. শর্মিলী পাল বলেন, 'মানুষ যদি নিয়মিত পানির সাথে এসব রাসায়নিক গ্রহণ করে তাহলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হয়। এগুলো একইসঙ্গে ক্যান্সারও তৈরি করে। আর গর্ভবতী মা যদি এই সমস্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকে তাহলে বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এতে করে বাচ্চাটা বিকলাঙ্গ, হাত পা বাঁকা অথবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।'
তাঁত কারখানার এমন রাসায়নিক থেকে পরিবেশ রক্ষায় বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই প্রকৃতিক ডায়িংয়ের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। যেখানে প্রকৃতি থেকে রং সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিকের প্রভাবে সিরাজগঞ্জে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর সংখ্যা
এছাড়া ছোট আকারে ইটিপি করেও রাসায়নিক মিশ্রিত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা আছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অংশ হিসেবে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পের দুই প্রক্রিয়ায় কেউ কেউ ডায়িং শুরু করেছেন। তবে এতে পরিবেশ দূষণ কমলেও খরচ বেশি হওয়ায় অনেক তাঁত ব্যবসায়ী আগ্রহী হচ্ছেন না।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'ইটিপি করার করণে ৪৪ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। আর অন্যদের কিন্তু ৪০ টাকা খরচ হচ্ছে। ন্যাচারাল ডাইংয়ের খরচ একটু বেশি হওয়ার কারণে বাজারে ওই পরিমাণ দাম আমি পাচ্ছি না। এই পদ্ধতিতে একটা শাড়িতে ৭০০ টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু ক্যামিকেল ডাইংয়ে খরচ হয় মাত্র ৩০০ টাকা।'
যেখানে দেশে হস্তচালিত তাঁত থেকে বছরে বস্ত্র উৎপাদন হয় প্রায় ৭০ কোটি মিটার। সেখানে বিশাল এই খাতটিকে পরিবেশবান্ধব করা কতটা সম্ভব? এমন প্রশ্নে অর্থনীতবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ বলেন, 'আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও পরিবেশের ভারসাম্যের যাতে ক্ষতি না হয় সেটা আমাদের একটা লক্ষ্য। আবার যারা ব্যবসা করেন তাদের মুনাফা হতে হবে। কাজেই এই দুই জায়গায় বাস্তবতার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা করা জরুরি।'
দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৪০ শতাংশ পোশাকের চাহিদা পূরণ হয় তাঁত শিল্প থেকে, যেখান থেকে রাজস্ব আসে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার।