দেশে এখন
স্বাস্থ্য
0

দৃষ্টিহীনদের জন্য আলো বগুড়ার চিকিৎসক পল্লব

১৪ হাজার চক্ষু রোগীকে বিনাখরচে সেবা

শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির এই দিনটিকে সবাই অবকাশের জন্য বেছে নিলেও ব্যতিক্রম বগুড়ার চিকিৎসক পল্লব কুমার সেন। সাড়ে চার বছর ধরে নিয়ম করে প্রতি শুক্রবার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখছেন পল্লব। সপ্তাহের একদিন পরামর্শ ফি হিসেবে রোগীদের কানা-কড়িও গুণতে হয় না। তাই বগুড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলার রোগীদের ভিড় জমে তার চেম্বারে।

রোগীরা জানান, 'আমরা গরিব মানুষ একদিন ফ্রি পাইলে অনেক উপকার হয়। সেই টাকা দিয়ে ওষুধ কিনলাম। উনি ইচ্ছা করলে এই একদিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কামাই করতে পারতো। কিন্তু উনি উদার মানুষ তাই বিনা স্বার্থে জনসেবায় কাজ করতেছেন। আমি একমাস পরে আজকে আবার আসছি, কোন টাকা লাগে নাই।'

টাকা-পয়সা নেই বা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বলে অনেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না।  চোখের আলো হারিয়ে আজীবনের জন্য কেউ যেন দৃষ্টিহীন না হোন সে জন্যই এমন উদ্যোগ।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. পল্লব কুমার সেন বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় একদিন মানুষের জন্য দিয়ে দেওয়া উচিত। শুক্রবার সকালটা আমি এই মানুষগুলোকে আর বিকেলটা পরিবারকে দেই। অনেক গরিব মানুষ অর্থের কারণে ডাক্তার দেখাতে পারছে না। কিন্তু তার তো চিকিৎসার দরকার আছে।'

চিকিৎসা ছাড়াও গরীব রোগীদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া নমুনা ওষুধ বরাদ্দ থাকে। কখনো পকেটের টাকায় ওষুধ এমনকি অপারেশনের খরচও এই চিকিৎসক বহন করেন। আর রেওয়াজ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সম্মানির পুরো টাকা অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করেন।

ডা. পল্লব কুমার সেন এখন টেলিভিশনকে আরও বলেন, ' গরিব ছাত্রছাত্রীরা যা দের বই কিনার টাকা নাই। তাদেরকে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাদেরকে টাকা পাঠাই তারা ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। এই কথা শুধু ছাত্ররা এবং আমি জানি। আর ঈশ্বর ব্যতিত অন্য কেউ জানেনা।'

সিনিয়র চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গেলে রোগীদের পরামর্শ ফি গুণতে হয় ৬০০  থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। রোগী প্রতি ৮০০ টাকা ধরলেও গেলো সাড়ে চার বছরে পরামর্শ ফি বাবদ- ১৪ হাজার রোগীর ১ কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় হয়েছে।

জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. সামির হোসেন মিশু বলেন, 'ডা. পল্লব কুমার সেন আমাদের কাছে বড় একটি দৃষ্টান্ত। আমরা আশা করি প্রত্যেক চিকিৎসক তাদের চাকরির পাশাপাশি সমাজ সেবামূলক কিছু কাজ করবে।'

২০০১ সালে চিকিৎসক পেশায় যোগ দেন পল্লব কুমার সেন। পরে চক্ষু বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন সেই জ্ঞান আর দক্ষতার আলোয় মানুষের চোখে আলো ফেরানোর লড়াই চলছে।