প্রতিবছর বৈশাখের শুরুতে কখনো মৃদু থেকে মাঝারি আবার কখনো তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায় চুয়াডাঙ্গায়। তবে এবারের গরমের তীব্রতা যেন আরও রুদ্র রূপে হাজির হয়েছে সীমান্তবর্তী এই জেলার মানুষের কাছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা। প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে গরমের রেকর্ড গড়ছে চুয়াডাঙ্গা। যার প্রভাবে কুলিয়ে উঠতে পারছে না প্রাণীকুল।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘গরমে শরীর জ্বালাপোড়া করে, প্রচন্ড পানি পিপাসা পাচ্ছে। ঠান্ডা পানি খেয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ছাতা ছাড়া বের হওয়া অসম্ভব। এই দাবদাহে বেঁচে থাকাটা খুব কষ্টকর।’
এপ্রিলের শুরু থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। শুধু চলতি বছর নয়, আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছরও টানা কয়েকদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এই জেলায়। তথ্য বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০১৪ সালে ২১ মে। সেসময় রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এবছর সেসব রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রার পারদ।
তবে উষ্ণতার এই কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুকুর-জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হচ্ছে দিনের পর দিন। গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে বনভূমি। তাই সময়ের সাথে উষ্ণ হচ্ছে প্রকৃতিও।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, 'ভৌগলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় সূর্যের তাপ এখানে খুব প্রখরভাবে পড়ে। এই জেলা সমতলভূমি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে গরম হাওয়া খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।'
জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মানি খন্দকার বলেন, 'ইটভাটাগুলোতে কয়লার বদলে খরি ব্যবহার করা হয়। যে কারণে চুয়াডাঙ্গার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় গাছ লাগানো হচ্ছে না।'
জেলা প্রশাসক বলছেন, গরমের এই তীব্রতা কমাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি গাছ-জলাশয় বাড়ানোর কথা বলছেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা।
তিনি বলেন, 'মানব সৃষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। যেগুলো এ তাপপ্রবাহকে প্রলম্বিত করতে সহায়ক করছে। এখানে ১২-১৩ শতাংশ জলাশয় আছে। যদি এটি আরও বেশি পরিমাণে থাকতো তাহলে পানির প্রাকৃতিক হিলিং সিস্টেম কাজ করতো।'
২০২২ সালের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর ২০২৩ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।