ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিলো ২০২৩ সাল। তীব্র গরমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনমনে ছিলো নাভিঃশ্বাস। উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতে যখন গলছিলো হিমবাহ, তখন পূর্ব ও পশ্চিমে নেমে আসে খরা। ইতালির পো, জার্মানির রাইন, যুক্তরাজ্যের টেমস কিংবা ফ্রান্সের লইর, ইউরোপের বড় নদীগুলোতে দেখা যায় অস্বাভাবিক খরা।
গেল বছর থেকে বাড়তে থাকা তাপমাত্রার পারদ যেন নামছেই না। প্রতিমাসেই ভাঙছে তাপমাত্রার রেকর্ড। গেল মার্চ ছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এনিয়ে টানা ১০ মাস ধরে উষ্ণতম মাসের রেকর্ড দেখলো বিশ্ববাসী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের প্রতিবেদন বলছে, গেল মাসে বিশ্বের সব প্রান্ত মিলিয়ে গড় তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক এক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা শিল্পযুগ পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে প্রায় ২ ডিগ্রি বেশি। একইসঙ্গে গেল ১২ মাসের গড় তাপমাত্রাও ছিলো সর্বোচ্চ। দীর্ঘ সময় ধরে তাপমাত্রার পারদ বাড়তে থাকাকে উদ্বেগজনক বলছেন বিজ্ঞানীরা।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ড. সামান্থা বার্গেস বলেন, 'প্রতিনিয়ত আবহাওয়া পরিবর্তনশীল হওয়ায় গরমের সময় তাপপ্রবাহের দাপট আবার শীতের সময় বেশি নেমে যাচ্ছে তাপমাত্রার পারদ। তবে গরম আবহাওয়া দীর্ঘ সময় ধরে থাকারও রেকর্ড হচ্ছে। এমন বিষয়টি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।'
প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠে তাপমাত্রা ওঠানামায় চলছে এল নিনো চক্র। তাই বায়ুর তাপমাত্রার পাশাপাশি গেল মার্চে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রাও ছিলো ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২১ দশমিক শূন্য সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিশ্বের ৭০ শতাংশ এলাকাজুড়ে আছে সাগর- যা পৃথিবীর ৯০ শতাংশ তাপ শোষণ করে। উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠ বায়ুমণ্ডলে তৈরি করে অতিরিক্ত আর্দ্রতা। এতে তাপপ্রবাহ ও দাবানল পরিণত হয়েছে নিয়মিত ঘটনায়। অন্যদিকে মৌসুমী সাইক্লোন বেড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে হঠাৎ করে দেখা দিচ্ছে অতিবৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাই পৃথিবী ও মানবজাতিকে রক্ষায় দ্রুত বন্ধ করতে হবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার।