বিশেষ প্রতিবেদন , পুঁজিবাজার
অর্থনীতি
0

২০২৫: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ফিরে আসার বিষয়ে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা

২০২১ সালের পর ২০২৪ এ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। বছরজুড়ে সূচকের পতনে নিঃস্ব হয়েছে অনেকে বিনিয়োগকারী। যা অনেকটা নীরব রক্তক্ষরণ বলছেন তারা। এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের লুটপাটকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তবে যে সংস্কার শুরু হয়েছে এতে আগামী বছরের মাঝামাঝি এর সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ফিরে দেখা ২০২৪ এ বছরজুড়েই টালমাটাল ছিল পুঁজিবাজার। সূচক-মূলধন-পুঁজি কমে নিঃস্ব হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

২৪ এ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পতনের সাথে সাথে সেসময়ের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা আত্মগোপনে গেলে সামনে আসতে থাকে বাজারের আসল চিত্র।

এতে একদিকে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসন যেমন বাজারের ক্ষতি করেছে, অন্যদিকে ৫ আগস্টের পরে এ খাতকে পুনরুদ্ধারের অপার সুযোগ পাওয়া গেছে।

বছরটিতে দেখা যায় অর্থ পাচার, রিজার্ভ সংকট, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট এবং দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতা পুঁজিবাজারকে আরো তলানিতে ঠেলে দিয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে ধরাবাহিকভাবে সূচকের পতনের সঙ্গে কমেছে বাজার মূলধন।

এমন পরিস্থিতি বিএসইসির নতুন কমিশনাররা দায়িত্ব নেয়ার পর কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি।

তথ‌্য বলছে, গত এক বছরে সূচক হারিয়েছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি। আর বিনিয়োগকারীরা বাজার মূলধন হারিয়েছে সোয়া লাখ কোটি টাকার বেশি। আর লেনদেনের খরা ছিল সারা বছর জুড়েই।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি নতুন উপদেষ্টা ও কমিশনার পাওয়ার পর জানানো হয় পুঁজিবাজারের আসল অবস্থার কথা। জানানো হয় আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে অবাধ লুটতরাজ হয়েছে।

এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও অস্তিত্বহীন কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এসব কোম্পানি এখন বাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শ্বেতপত্র কমিটি জানিয়েছে গত দেড় যুগে বাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সেই সাথে গত ১৫ বছরে যে অস্তিত্বহীন মন্দ কাগুজে কোম্পানি বাজারে আনা হয়েছে এতে গত বছরেও প্রায় ১ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছে। আর পট পরিবর্তনের পর নাম মাত্র কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরিমাণও কমেছে।

নতুন কমিশনার দায়িত্ব নেয়ার পর খাইরুল ও শিবলী কমিশনারদের আমলে করা অনিয়মে চার মাসে প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যা এতদিন কারসাজিকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে আসা হচ্ছিল।

আর এই কারণে বর্তমান কমিশন আসার পর এ বাজারের আস্থা ফেরাতে গঠন করে অনিয়ম-কারসাজি-দুর্নীতি অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি । সেই সাথে সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

তাই বিগত সময়ে এ বাজার লুটপাটের পুঁজিবাজার ছিল বলে জানান বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন বলেন, ‘বিগত সময়ে যা ঘটেছে তার দায়দায়িত্ব যেমন বর্তমান কমিশনের নাই বর্তমান সরকারেরও নাই। একদিকে হচ্ছে তারল্যের জটিলতা অন্যদিকে মানুষের আস্থার সংকট। তবে আমি যদি সম্ভাবনার কথা বলি তাহলে ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার কিছু সুফল অর্থনীতিতে দেখা যাবে।’

তবে সঠিকভাবে সংস্কার হলে আগামী বছরেই বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা প্রকাশ করলেন এই বিশেষজ্ঞ।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগ কমেছে, এগুলো সত্য কথা। আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে। তবে নতুন বছরে আমি আশা করছি যে সুদের হার নমনীয় হবে। শেয়ার বাজারের দিকে ফান্ড ফেরত আসবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়ানোর যে সুযোগ পাওয়া গেছে তা কাজে লাগাতে না পারলে এ বাজার তলানিতে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এএইচ