বাংলাদেশে নিবন্ধিত যানবাহন ৫৭ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। অপরদিকে বছরে দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের চাহিদা গড়ে ৭০ লাখ টন। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহার হয় ১৫ লাখ টন।
গবেষণা বলছে, রাজধানী ঢাকায় সব ধরনের বায়ু দূষণের ১৫ শতাংশ হয় যানবাহনের ধোয়া থেকে। আর বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ০.০৩৬ শতাংশ দূষণ করে বাংলাদেশ। মোড়ল দেশগুলোর চেয়ে এতো কম দূষণের পরেও ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন না হলে গার্মেন্টস পণ্য গ্রহণে সতর্কতা দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার। পরামর্শ জীবাশ্ম জ্বালানি ও ফসিল ফুয়েল থেকে বের হয়ে আসার।
পরিবেশ রক্ষায় অতিরিক্ত গাড়ি কেনাকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রাজস্ব বাড়াতে চলতি অর্থ বছরে দেড় হাজার সিসি থেকে সাড়ে তিন হাজার সিসি পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করে এনবিআর। তবে, দেশের বাজারে চাহিদা বাড়ছেই ব্যক্তিগত গাড়ির। এ অবস্থায়, রাষ্ট্রের কাছে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি ও দেশে চলাচল সহজে কারিগরি সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা।
কার সিলেকশন স্বত্বাধিকারী মো. আসলাম সেরনিয়াবাত বলেন, 'আমরা চায় বৈদ্যুতিক গাড়ি আসুক বাংলাদেশে। কিন্তু এর আগে বৈদ্যুতিক গাড়ির সারচার্জ স্টেশনগুলোতে নজর দিতে হবে।'
বাংলাদেশের রিকন্ডিশন ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানির বড় বাজার জাপান নির্ভর। তবে, বড় পরিসরে বৈদ্যুতিক গাড়ি রপ্তানি শুরু করেনি তারা। তুলনামূলক উৎপাদন কম থাকায় এর দামও বেশি। তার ওপর যুক্ত হয় প্রায় ৯০ শতাংশ শুল্ক। এছাড়াও ইঞ্জিন নাম্বার না থাকায় সুনির্দিষ্ট ট্যাক্স আরোপ ও বিআরটিএ থেকে অনুমোদন পাওয়া নিয়ে আছে বেশ জটিলতা। সব পেরিয়ে দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত আসা ২০ থেকে ২২ টি গাড়ির কেনোটির দামই কোটি টাকার নিচে নেই। তাই মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে হলে নীতিমালা করতে হবে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, 'যে গাড়িগুলো আসছে সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে কিন্তু এখনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। বৈদ্যুতিক গাড়ি নরমাল গাড়ি থেকে কিনতে গিলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দাম বেশি।
পরিবেশ রক্ষায় বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির পক্ষে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও। ২৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকায় সমস্যা হবে না গাড়ি চার্জিং ব্যবস্থায়। তাই আগামী বাজেটে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীরও।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'বৈদ্যুতিক গাড়ির ট্যাক্সের ব্যাপারে শীতল হওয়া দরকার। যে পরিমাণ গাড়ি আছে পাবলিক ইউটিলিটিসহ যদি তার ৫০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি হয় তাহলে সরকারের ডলার সাশ্রয় হবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত আমাদের ২৫০ এর উপর চার্জিং স্টেশনের পারমিশন হয়ে গেছে।'
প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমতে থাকা আর মূল্যের অস্থিরতায় জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির চাপ। অপর দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশজ মোট উৎপাদনের ৭ শতাংশ হারাতে পারে বাংলাদেশ। তাই বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও বরাবরের মতোই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।