গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পরপর তিনমাস বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ করে বাড়িয়েছিল সরকার। এবার গেল ফেব্রুয়ারি থেকেই বর্ধিত মূল্যে বিদ্যুতের দাম দিতে হলো গ্রাহককে। খুচরায় ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। ধাপে ধাপে দাম বাড়ানোর এ প্রক্রিয়াকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে মূল্য সমন্বয়।
যেটি সাধারণ গ্রাহকের কাছে মোটাদাগে দাম বৃদ্ধি। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াই মূল্য সমন্বয়ের মূল কারণ। বিভিন্ন সময়ে এমনটাই জানিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। আর আইএমএফের শর্তানুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্যুৎখাতের সব ভর্তুকি তুলে নিতে চায় সরকার।
সামনের দিনগুলোতেও তাই মূল্য সমন্বয়ের নামে দাম বাড়বে বিদ্যুতের। এ মূল্যবৃদ্ধিতে এই খাতে সরকারের খরচ কমবে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। তবুও এ খাতে সরকারের ব্যয় থাকবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। যা সমন্বয়ে এসএমই খাতে সর্বনিম্ন ৯.১২ শতাংশ আর সর্বোচ্চ সেচ খাতে ১১.০২ শতাংশ বাড়ছে বিদ্যুৎ খরচ।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি'র কার্যালয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিকল্প কী হতে পারে? তা নিয়ে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। গবেষণায় উঠে এসেছে মূল্যবৃদ্ধিতে বেশকিছু অসঙ্গতি।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি'র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার থেকে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তাই প্রয়োজন না হলেও অনেক ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল ব্যয় করতে হচ্ছে সরকারকে। যা সমন্বয়ে দাম বাড়ছে বিদ্যুতের। এ বৃদ্ধিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের জনজীবনের ব্যয় বাড়াবে সাড়ে ৯ শতাংশ। এমন তথ্যই উঠে এসেছে গবেষণায়।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'আমরা যেটা দেখতে পেয়েছি পরিবার প্রতি গড়ে জ্বালানির ব্যয় বাড়বে ৯.৭ শতাংশ। অর্থাৎ যে হারে সরকার বাড়িয়েছে তার বিদ্যুৎজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পাবে মাসে সাড়ে ৯ শতাংশ।'
গবেষণায় ৪টি প্রস্তাবনা দেয়া হয়। যার মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়েই এ খাতের ভর্তুকি কমানো সম্ভব। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ পরিহার, ব্যবহার অনুযায়ী খরচ অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ না কিনলেও ভর্তুকি কমার বদলে মুনাফা থাকবে এ খাতে।
গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, 'নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে সরকারের কিন্তু বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। ২০২৫ সালের ভিতরে ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, ৩০ সালের মধ্যে ৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, ২০৪১ সালের ভিতরে ৬৩ হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব বাঁচাতে পারবে। এর সাথে আগের ভর্তুকি সমন্বয় করা হলে হিসেব অনুযায়ী ৮ শতাংশ হারে ভোক্তার উপর মূল্য দিলে ৫ বছরের মধ্যে বিপিডিবির কোন ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।'
গবেষণায় উঠে এসেছে, যে হারে শিল্পখাতে বিনিয়োগের প্রত্যাশা ছিল তেমন বিনিয়োগ আসেনি। তাই বিদ্যুতের যোগান বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ ফেলছে অর্থনীতিতে। সার, কেমিক্যাল, ফার্নিচার, গ্লাস, কাগজ ও সিমেন্টসহ বেশকিছু বিদ্যুৎভিত্তিক খাতে মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। বিদ্যুতের চাপ কমাতে ধীরে ধীরে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শও তাদের।