মেয়াদ পেরিয়েছে অধিকাংশ যন্ত্রপাতির। ফলে বেড়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। এতে হ্রাস পেয়েছে উৎপাদন সক্ষমতা। তবুও জোড়াতালি দিয়ে ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আওতাভুক্ত ৭ জেলায় জোগান দিচ্ছে আশুগঞ্জ সার কারখানা। তবে, বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা ১৬শ' টন থেকে নেমে এসেছে ১১শ' টনে।
মূলত ইউরিয়া উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস, পানি ও বাতাস। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৬শ' পিএসআই চাপে ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। তবে, চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ায় বছরের অর্ধেক সময় ব্যাহত হয় সার উৎপাদন।
আশুগঞ্জ সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন-
অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টন ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৭ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৮০ হাজার টন ৯৬ হাজার ৪৬ টন,২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ টন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ টন,২০২৩-২৪ ১ লাখ টন ৪৮ হাজার ৪৫৩ টন।
অভিযোগ রয়েছে, বিদেশ থেকে সার আমদানির জন্য একটি চক্রের নির্দেশে বছরের বেশিরভাগ সময় আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। সর্বশেষ গেলো বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ ছিল। পরে শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। তবে, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে না পারায় দিন দিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে কারখানাটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোদমে সার উৎপাদন করা গেলে কারখানাটি লাভবান হওয়ার পাশাপাশি কমে আসবে আমদানি নির্ভরতাও। যার জন্য প্রয়োজন নতুন যন্ত্রপাতি।
আশুগঞ্জ সার কারখানা এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার বলেন, ‘কারখানা চালু করে আমরা যদি লো লেভেলে চালাই তাহলে সাড়ে এগারো শ টন সার বের হয়। সাড়ে এগারো শ টন সারের মূল্য প্রায় চার কোটি টাকার কাছাকাছি। তাই এই লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখলে তো প্রতিষ্ঠান লাভের মুখ দেখবে না এটা স্বাভাবিক।’
জাতীয় গ্রিডে চাপ কম থাকায় সার কারখানায় চাহিদা মতো গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না বলছে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি। আর গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদনে গতি আনা যাচ্ছে না বলছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রেজা বলেন, ‘ গ্যাসের স্বল্পতার কারণে আমরা তাদের চাহিদা মতো গ্যাস দিতে পারি নাই। ৪২ বার চাইলে আমরা পেয়েছি ৩৮ বার। সরকার কখন বিদ্যুতে ও কখন সারে গ্যাস দিবে সেটার একটা বরাদ্দ থাকে। সারা দেশে সারের জন্য বরাদ্দ থাকে সাড়ে ৩৫। এটা দিয়ে তিন থেকে চারটা সারকারখানা চলার কথা।’
আশুগঞ্জ সার কারখানা অ্যামোনিয়া প্লান্ট ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘বর্তমানের সমস্যা হলো গ্যাসের কম প্রেসার, এটার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।আমরা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
১৯৮৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা আশুগঞ্জ সার কারখানার তালিকাভুক্ত ডিলার প্রায় সাড়ে ৭শ'। এখানে উৎপাদিত প্রিলড ইউরিয়া সার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে সরবরাহ করা হয়।