জলাভূমি হওয়ায় অন্য ফসলের চেয়ে এখানকার মাছের উৎপাদন বেশি। প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা মাছ বেশ সুস্বাদু। ফলে চাহিদাও অনেক। জুনের শেষ দিকে বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অবমুক্ত করে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ছয় মাস পর থেকে সেই মাছ ধরতে বিলে নামেন জেলেরা। সমিতির অধীনে চার হাজার সদস্য রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই জীবিকা এ বিলের আয় থেকে।
ভরা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মাছ বেচা-কেনা হয় বিল থেকে। এভাবে চলে ৬ মাস পর্যন্ত। ভোর থেকেই জেলেরা বিলে জাল ফেলতে শুরু করেন। দুপুরের আগেই শেষ হয় মাছ ধরা। বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতার ভিড় লেগে থাকে সকাল থেকেই। এ বিলে পাওয়া যায় রুই, কাতল, সিলভারকার্প, মিররকার্প, চিংড়িসহ নানা জাতের মাছ।
সমিতির একজন বলেন, 'এখানে ৫০ জন লোক পাহারা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। ২০০ জন লোক মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। গড়ে ৪-৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয় চাপাদাহ বিল থেকে।'
আরেকজন সদস্য বলেন, 'অনেক বড় এরিয়া নিয়ে এই বিল। ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।'
শুধু মাছই নয়, জীববৈচিত্র্যেরও আধার বিলটি। বিভিন্ন প্রজাতির বক, মাছরাঙ্গা, পানকৌড়ি ছাড়াও অতিথি পাখিও আসে এই বিলে।
সমিতির সদস্যরা জানান, বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার পোনা ছাড়া হয় এখানে। ৫ থেকে ৭ টাকার একটি পোনা ৬ মাসেই ৫শ' থেকে ৭শ' টাকা দামে বিক্রি করা যায়। কৃত্রিম খাবার না লাগায় উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। তাই লাভ হয় বেশ।
মাছ ব্যবসায়ী বলেন, 'এই বিলের মাছ অনেক সুস্বাদু। এখানে কোনো মাছে ফিড, ভিটামিন দেওয়া হয় না। আগে পরে প্রত্যেক বছরই এই বিল থেকে মাছ নিতে আসি। চাহিদা মাফিক পছন্দসই মাছ পাওয়া যায়।'
বিলকে ঘিরে এই অঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকার প্রসার হয়েছে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.জসিম উদ্দিন বলেন, 'বিল চাপাদাহ মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এলাকার যেসমস্ত অসহায় এবং অসচ্ছল মানুষগুলো এই বিলে কাজ করে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।'
একসময় প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও গত ১০ বছর যাবত জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে সমিতির তত্ত্বাবধানে চলে মাছ চাষ।