যশোরের ঝিকরগাছাসহ আশপাশের ৩০ থেকে ৪০ গ্রামে খেজুরপাতা ও কাশফুলের খড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে হাতে তৈরি নানা পণ্য। এসবের মধ্যে রয়েছে নানা রকম ঝুড়ি, টেবিল ম্যাট, শোপিস। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যা রপ্তানিও হচ্ছে সুইডেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশে।
নারী উদ্যোক্তা লুচিয়া বিশ্বাস বলেন, 'প্রায় ৩০ টার মতো দেশে আমাদের পণ্য যায়। প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার কাজ করে থাকি।'
অসুস্থ স্বামীকে সহযোগিতায় সংসারের হাল ধরেন হ্যাপি মন্ডল । শুরু করেন খেজুরপাতা ও কাশফুলের খড় দিয়ে পণ্য তৈরি। এই ব্যবসার আয় থেকে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি করেছেন দোকান। এখন ৩ জনের সংসার চলছে বেশ ভালোভাবেই।
হ্যাপি মন্ডল বলেন, 'মেয়েদের পড়াশোনা এই কাজ থেকেই চলে। আমরা তিনজনেই এই কাজ করি।'
হ্যাপির মত এই উপজেলার অন্তত ৭ হাজার নারী সাংসারিক কাজের ফাঁকে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন পণ্য। যা দিয়ে চলছে সংসার।
তারা বলেন, 'সংসারের কাজ করে যতটুকু সময় পাই ততটুকুই করি। এই কাজ করে ঘর ভাড়া দেই, সংসার চালাই।'
অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজ করে পড়ালেখার খরচসহ বাড়তি আয় করছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিতে হয় না। স্কুলের বেতন, টিউশনির খরচ এখান থেকেই দিতে পারি। পরিবারকেও সাহায্য করত পারি।'
খড় দিয়ে পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত এক গ্রামীণ নারী
সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও বেশি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি সম্ভব বলে জানান উদ্যোক্তারা।
এই শিল্পের প্রসারে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তাসহ নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, 'যারা দক্ষ তাদেরকে আমরা ব্যবহার করবো আর অন্যান্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করব। তারা চাইলে অবশ্যই আমরা পুঁজি সহায়তা দিব।'
বর্তমানে এখান থেকে বছরে আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। সরকারি সহযোগিতা পেলে খেজুরপাতা, কাশফুল আর খড় দিয়ে নানান ধরনের পণ্য তৈরি করে বছরে আয় হতে পারে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা।