অর্থনীতি
0

হস্তশিল্পের পরিকল্পনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

হস্তশিল্পে ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ। এজন্য সঠিক পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য ঘোষণায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন অনেক উদ্যোক্তা।

নীলফামারীর সৈয়দপুরের রাজিয়া সুলতানা সুতা দিয়ে ঘরের নানা সৌখিন জিনিস তৈরি করেন। ২০২০ সালে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে পাটের পণ্য তৈরি শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সুতা দিয়ে তৈরি করছেন ব্যাগ, কুশন কাভার, শিকিয়া, প্লান্ট হ্যাঙ্গারসহ নানা জিনিস। তার সাথে কাজ করছেন আরও ১০ জন নারী। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার পণ্য অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে। বছরে ৫ লাখ টাকার পণ্য তৈরি করলেও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে ব্যবসার আরও প্রসার সম্ভব বলছেন তিনি।

রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমাদের তৈরি পণ্য এখন ৮টি দেশে যাচ্ছে। আর ব্যাংক ঋণের সহযোগিতা পেলে এসব পণ্য উৎপাদন আরও বাড়তো।’

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কাইদুজ্জামান আজাদের গল্পটা একইরকম তবে পরিসর একটু বড়। নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে ২০১৬ সালে স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান রংজুট বিডি গড়ে তোলেন। যেখানে পাপোশের পাশাপাশি পাট ও হোগলা পাতার অন্তত ২০ ধরনের পণ্য তৈরি করেন তিনি। যার শতভাগ বিদেশে রপ্তানি হয়। যেখানে কাজ করে অন্তত সাড়ে তিনশ’ নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কারখানায় কাজ করছেন স্থানীয় নারীরা। ছবি: এখন টিভি

নারী শ্রমিকরা বলেন, ‘এখানে কাজ করে আমরা প্রতি মাসে আয় করতে পারছি। বাড়ির কাছেই কারখানা হওয়ায় কাজ করতে অসুবিধা হয় না।’

১০ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন আজাদের পুঁজি প্রায় ১০ কোটি টাকা। বছরে বিক্রি করেন ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার পণ্য।

রংজুট বিডির মালিক প্রকৌশলী কাইদুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘আমরা বিশেষ করে, এসব পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করি। আমরা বড় বড় কোম্পানির মাধ্যমে এগুলো বিক্রি করে থাকি।’

রাজিয়া কিংবা আজাদই নয় রংপুরে এমন অনেক উদ্যোক্তা আছেন। তবে এই সংখ্যা কত তার কোন হিসাব নেই কোন দপ্তরের কাছে। এমনকি বিভাগভিত্তিক কত টাকার পণ্য রপ্তানি হয়, এই হিসাব নেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছে। গত ৫ বছরে ওঠানামা করেছে হস্তশিল্প রপ্তানির চিত্র। এর কারণ হিসেবে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকাকে দায়ী করছেন গবেষক ও বিশ্লেষকরা।

গবেষক ড. এ কে এম মাসুদুল হক বলেন, ‘গবেষণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব।’

পরিসংখ্যানের আশ্বাস মিললেও কিভাবে পরিসংখ্যান নির্ণয় করবেন তা এখনও নিরুপণ করতে পারেনি প্রশাসন। তবে উদ্যোক্তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণের বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ।