অর্থনীতি
0

'সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে নদীপথ দ্বিগুণ করা সম্ভব'

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে বর্তমান অবস্থাতেই দেশের নদীপথ দ্বিগুণ করা সম্ভব- এমন তথ্য উঠে এসেছে আইডব্লিউএমের সমীক্ষায়।

বর্তমানে দেশে শুষ্ক মৌসুমে নদীপথের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ২শ' কিলোমিটার। যা বর্ষা মৌসুমে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭ হাজার ৮শ' কিলোমিটারে।

মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এসব নদী ও হাওড়ের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেশের নদীপথকে গভীরতার দিক দিয়ে মোট ৬টি শ্রেনিতে বিন্যাস করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং-আই ডব্লিউ এম। যেখানে সমীক্ষায় দেখা গেছে নদী রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ চাইলে দেশের নদীপথকে ১৬ হাজার ১শ' ৫৫ কিলোমিটারে উন্নীত করা সম্ভব। যার ৭ হাজার কিলোমিটার শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে চলাচল উপযোগী। এতে নৌ-রুট হবে ৩৭৬ টি। সবশেষ ১৯৮৯ সালে বিদেশি একটি সংস্থা'র করা সমীক্ষায় যা ছিল ৫ হাজার ৯শ' ৬৮ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

আই ডব্লিউ এম এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ফারহানা আক্তার কামাল বলেন, 'বর্তমান সরকার যেটা করছে সেই আগের ৬ হাজার কিলোমিটারের সাথে আরও ৪ হাজার কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তারা এই নেটওয়ার্কের মধ্যে আনছে। কিন্তু এর বাইরেও প্রচুর নদী পথ আছে।'

কর্মশালায় দেশের নদী ও নদীপথ হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় অপরিকল্পিত সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নকে। বিশেষ করে নিচু সেতু ও অযাচিত কালভার্টকে। এ সময় নৌ পরিবহন সচিব সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও দফতরের সমালোচনা করে বলেন, অনেক সময় টাকা বাঁচাতে নিচু সেতু করার জন্য নদীর শ্রেনি পরিবর্তনেরও আবেদন করা হয় কোন কোন সংস্থা থেকে। এছাড়া পর্যাপ্ত উঁচু সেতু না থাকায় নদীকে ঘিরে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। তিনি আরও বলেন, ' ঢাকার চারপাশের কথায় ধরেন অনেক কিছু করতে চাচ্ছি। কিন্তু করতে পারছি না কারণ এইটা আমাদের সমস্যা ।'

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো.মোস্তফা কামাল বলেন, 'ব্রিজ কনস্ট্রাকশন করতে গেলে যে বরাদ্দ ওনার আছে এই টাকা দিয়ে হয় না। এখন ক্যাটাগরি চেঞ্জ করে ফেলতে হবে তাহলে আর ঐ হাইট লাগবে না নদী কি এইটা বুঝে? নদী তো তার নিজের ক্যাটাগরি চেঞ্জ করবে না , আমরা কাগজে কলমে চেঞ্জ করে দিলাম। এখন থেকে যেসকল ব্রিজ পুরনো হয়ে গেছে সেগুলো যদি পুণঃনির্মাণ করতে গেলে এই হাই ওয়াটার লেবেল অবশ্যই বিবেচনা নিয়ে করতে হবে।'

কর্মশালায় নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, দখল, দূষণ আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে নদী ধীরে ধীরে সব খালে রুপান্তর হয়ে যাচ্ছে।এছাড়া সড়ক বিভাগকে নদীর ওপর উন্নয়নের জন্য অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ না করার আহ্বান জানান তিনি।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এলজিইডি করছে বক্স কালভার্ট । দেখা যায় যেই ফ্লাশ ওয়াটার আসে বক্স কালভার্ট ঘরের মতো ভেঙ্গে যায়। নদীর স্লিটেশনের জন্য তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করা যেতে পারে। কারণ তাদের যে পরিমাণ কংক্রিটের ব্লক এই নদীর মধ্যে আছে, লাখ লাখ কোটি কোটি ব্লক এইগুলা তো শেষ হয়ে যায়নি।'

কর্মশালায় বিভিন্ন দফতর ও সংস্থা থেকে পাওয়া পরামর্শ নিয়ে শিগগিরই একটি সমীক্ষা প্রকল্প তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে নদীপথের উন্নয়ন, গভীরতা ও ট্রাফিক গুরুত্বের ভিত্তিতে শ্রেনীবিন্যাস করে সঠিক রক্ষণাবেক্ষনে সরকার কাজ করবে বলেও জানানো হয়।


ইএ