ঝরা পাতার দিন ফুরিয়ে শিমুল পলাশের রাঙা প্রভাত অপেক্ষা করছে। হিমের দেবতাকে বিদায় জানিয়ে তার জায়গা নিতে অপেক্ষা করছে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতিতে বসন্ত ধরা দেয় ফুলের সমারোহে। আর রাজধানীতে বসন্তের আগমন বোঝা যায় ফুলের বাজার, পোশাকের বেচাকেনা কিংবা অলংকারের দোকানে ক্রেতাদের সরগরম পদচারণায়।
ক্রেতারা বলেন, 'উৎসবের জন্য ফুল খুব পছন্দ করি। তাই ফুল কিনতে আসা। শাড়ি পড়ার পর হাতে ও খোপায় ফুল দেয়া খুব ভালো লাগার বিষয়।'
ফাল্গুন মাসে দেশের ফুলের বাজার জমে ওঠে। কারণ এই ফাল্গুনে বসন্ত বরণ ছাড়াও ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার ফাল্গুন ঘিরে দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন ও সরবরাহের খরচ গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় এবার ফুলের দাম বেশি। সব মিলিয়ে এবার ফাল্গুন মৌসুমে রাজধানীতে ফুলের বেচাকেনা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে রাজধানীর ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়
শেরেবাংলা নগর ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, 'এবার আমাদের দেশিয় ফুলের দামটা একটু বেশি। কারণ উৎপাদন এবং পরিবহন খরচ বেশি পড়েছে। সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি। তবে দামে খুব একটা পার্থক্য হবে না।'
ফাল্গুন ঘিরে শুধু ফুলের বাজারই নয় জমে উঠেছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, অলংকার, থেকে খাবার-দাবারের ব্যবসা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই পোশাক এবং অলংকারে দিয়েছে বিশাল ছাড়। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ছাড়ের চিত্র বেশি দেখা গিয়েছে।
আপন জুয়েলার্সের ম্যানেজিং পার্টনার গুলজার আহমেদ বলেন, 'একুশে ফেব্রুয়ারি এবং ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আমরা প্রতিবছর একটা ছাড় দিয়ে থাকি। এই সময়টার মধ্যে আমরা অনেক ধরনের অলংকার প্রদর্শন করি। যা বছরের অন্যান্য সাধরণত পাওয়া যায় না।'
এদিকে বেশ কয়েক বছর আগেও ফল্গুন শুধু প্রকৃতিতেই তার ছাপ ফেলতো। তবে দিন যত গড়াচ্ছে তত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে দিনটি। যাকে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলগুলোতে মিলছে ছাড়
অর্থনীতিবিদ আবদুল বায়েস বলেন, 'মাথাপিছু আয় বাড়াল ফলে মানুষ খাদ্য থেকে খাদ্য বহির্ভূত আয় বেশি করছে। মানুষ এখন আমোদ প্রমোদ করছে। সবচেয়ে বড় কথা এ সমস্ত অনুষ্ঠান হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটা বড় বিষয়। ফাল্গুন মাসকে ঘিরে ফুলের চাষ, বাণিজ্য এবং নানা ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে।'
ঝড়া পাতার বিষন্নতা কাটিয়ে আবারও দুয়ারে ফাল্গুন। শীতের কুয়াশা আর অর্থনৈতিক মন্দা ঝেড়ে ফেলে ঋতুরাজ বসন্ত বরণের মধ্য দিয়ে বাঙালী স্বপ্ন বুনবে নতুন বছরের।
শীতে প্রকৃতি রুক্ষ আর প্রাণহীন রূপ ধারণ করে। ফাল্গুন এসে প্রকৃতিকে সেই জীর্ণদশা থেকে মুক্তি দেয়। তাইতো ফাল্গুনকে বরণ করতে মানুষের এত আয়োজন। লাল, নীল, হলুদ, সাদা ফুলে সেজে ওঠে লতা, গুল্ম আর বৃক্ষরা। এই ফাল্গুনে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ভালোবাসা দিবস। আর এই দিন দুটি ঘিরেই দেশের অর্থনৈতিক গতিও তরান্বিত হয়।