ফাগুনের হাওয়ায় দুলছে রক্তরাঙা শিমুল, বাসন্তী পলাশ আর স্নিগ্ধ কাঞ্চন ফুল। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ রেললাইন ও সড়কের দু'ধারে শতাধিক শিমুল গাছে যেন লেগেছে আগুন। একইভাবে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ফুটেছে বাসন্তী পলাশ আর মোহনীয় কাঞ্চন ফুল।
ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু চক্রের পালাবদলের সাথে সাথে বাংলার প্রকৃতিও যেন সেজে উঠে ভিন্ন ভিন্ন রঙের সৌন্দর্যে। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের কথা মাথায় এলেই চোখে ভেসে উঠে শিমুল,পলাশ আর কাঞ্চনসহ নানা ফুলের সমারোহ। বসন্তে প্রকৃতি যেন ঢেলে দিয়েছে তার সবটুকু মাধুর্য।
শিমুল ফুলের ফাঁকে সূর্য উঁকি দিয়ে মেতে উঠেছে বসন্তের আমেজে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন এই রঙের উৎসবে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, কেউবা রঙিন ফুলের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির মায়ায়।
দর্শনার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি মূলত ফটোশুট করার জন্য। এখানে চারপাশে এত ফুল!’
আরেকজন বলেন, ‘এখানে ঘুরতে এসেছি, প্রকৃতি দেখতে এসেছি। এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এখানে আসে। যেমন: বগুড়া, নাটোর থেকে অনেকেই এই জায়গায় ঘুরতে আসে।’
এদিকে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড় ছেয়ে আছে থোকা থোকা পলাশ ফুলে। পাতা-শূন্য গাছে থোকা থোকা ফুলের বাহার যেন বসন্তের অনন্য বার্তা বহন করছে।
দর্শনার্থী একজন বলেন, ‘জায়গাটিকে খুবই সুন্দর করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে সলপ, যেখানের ঘোল সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত। তাছাড়া কাছেই উল্লাপাড়া স্টেশন হওয়ায় যেকেউ এখানে আসতে পারে।’
অন্য আরেকজন বলেন, ‘এর আগেও একবার এসেছি এখানে, ভালো লাগায় এবছরেও এসেছি।’
শুধু সৌন্দর্য নয়, ভেষজ গুণসম্পন্ন এসব উদ্ভিদ পরিবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে নগরায়ণ ও পরিবেশ দূষণের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বৃক্ষ। তাই প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়ায় আহ্বান পরিবেশপ্রেমীদের।
উল্লাপাড়া মোমেন আলী বিজ্ঞান কলেজ, বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘শিমুল গাছ বসন্তে সৌন্দর্য বর্ধন করে, অগ্নিকণ্যার সৌন্দর্য বর্ধন করে, সেই সাথে ওষুধ ও কাঠও পেয়ে থাকি। তাই আসুন আমরা সবাই এই শিমুল গাছ রক্ষা করি, বেশি বেশি রোপণ করি এবং এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করি, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করি।’
রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘শিমুল গাছগুলো যে শুধু সৌন্দর্যই বর্ধন করে বিষয়টি তেমন নয়, এর কিছু ভেষজ গুণও রয়েছে। এই বিষয়গুলো তুলে ধরে যদি একটু পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করা যায় তাহলে এটা ধরে রাখা সম্ভব।’
শিমুল, পলাশ আর কাঞ্চনের সাথে মিতালি করে বসন্তের সৌন্দর্য যেন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পথে প্রান্তরে। তবে দ্রুত নগরায়ণের ও পরিবেশ দূষণের ফলে প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে বসন্তের সেই রূপ ও সৌন্দর্য। প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, বসন্তকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণ।