কারণে-অকারণে প্রতিদিনই বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর বিক্রিতেও। নির্মাণ সামগ্রীর দাম ছুঁয়েছে আকাশ। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি হচ্ছে সীমিত সংখ্যক আবাসিক ভবন। যে কারণে পুরাতন অ্যাপার্টমেন্ট কেনার দিকে ঝুঁকছে অনেকে।
অবসরের টাকায় এক বছর আগে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছিলেন আলফাজ উদ্দিন। বছর ঘুরতেই বেড়েছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম।
তিনি বলেন, আগে যে পেরেকের (লোহা) দাম ছিলো ৭০ টাকা কেজি, সেই লোহার পেরেক বর্তমানে ১৩০/১৪০ টাকা।
লাল বালু। সিলেট স্যান্ড নামেই পরিচিত সবার কাছে। যদিও ময়মনসিংহের দূর্গাপুর থেকে আসা লাল বালুও ঢাকার প্রয়োজন মেটায় অনেকখানি। বছরখানেক আগে ২০০ সিএফটির লাল বালু গাড়ি প্রতি ৮২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১০ হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গাবতলী বালুঘাটে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আগে এই একই ঘাটে শত শত ট্রাক লোড হয়ে বিভিন্ন সাইটে যেতো। এখন সেই দিন আর নেই। ৩/৪ দিন পর দুই তিন গাড়ি বালু লোড হয়।’
শীতের আগমনী বার্তার পাশাপাশি দেশে শুরু হয় ইট তৈরির কাজ। মাসখানেক হলো বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন ইট। দামও কমেছে আগের তুলনায় ২ টাকা। বর্তমানে দেশের বাজারে ১২ টাকা বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের ইট। তবে ক্রেতার দেখা নেই আগের মতো।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বেচাকেনা আসলে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এখন বেচা-কেনা নেই বললেই চলে।’
ভবন অথবা রাস্তাঘাট নির্মাণের একটি বড় খরচ গুনতে হয় পাথরে। ভারতীয় পাকুর অথবা দুবাইয়ে পাথরের চাহিদা সব থেকে বেশি। পাশাপাশি দেশিয় পাথরও ব্যবহার হয় অনেক নির্মাণ কাজে। ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে পাথরের দামে। সিএফটি প্রতি বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
মজবুত অবকাঠামোর প্রধান শর্ত ভালো রড। টন প্রতি লাখ টাকা ছুঁই ছুঁই রডের দাম। বছরের হিসেবে বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। একই অবস্থা সিমেন্টের। ব্যাগপ্রতি ভালো মানের সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
ভবন তৈরির কাজ শুরু হয় মাটি পরীক্ষা থেকে। এরপর ড্রইং-ডিজাইন চূড়ান্ত করে হাত দেয়া হয় নির্মাণ কাজে। মাটি খননের পর পাইলিং তৈরিতে চলে যায় ভবন নির্মাণ খরচের বড় অংশ। আগে ভবন নির্মাণে প্রতি সিএফটি ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে শেষ হলেও বর্তমানে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে।
ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত দুই বছরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে।’
দামের বৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে রংও। বার্জার ওয়েদার কোটের গ্যালন দুই বছর আগে ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বর্তমানে তা ১ হাজার ৭৮৫ টাকা। এছাড়া বাড়ির ভেতরের দেয়ালে ব্যবহৃত রং এর দামও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। বৈদ্যুতিক তারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। একই অবস্থা স্যানিটারি আইটেমেরও।
নির্মাণ খরচ বৃদ্ধির চাপ পড়েছে ফ্ল্যাট বিক্রিতে। সঙশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে নতুন ও পুরনো ফ্ল্যাটের দাম।
বিপ্রপার্টির সেলস এন্ড বিজনেস অপারেশন বিভাগের পরিচালক মনির আহমেদ খান বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে ফ্ল্যাটের। ’
নির্মাণ খরচ বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়। তাই আগের তুলনায় কমেছে ফ্ল্যাটের চাহিদা।