নড়াইল সদর উপজেলার গোয়ালবাথান গ্রামের মুন্সি বোরহান। তার মতো এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন তার বাবা, দাদা, পরদাদাসহ অন্তত আট পুরুষ।
বোরহান বলেন, 'আমার দাদার কাছে থেকে শুনেছি প্রায় তিনদিনের পায়ে হাঁটা পথ থেকে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসতো।'
সবুজ প্রকৃতির মাঝে ঐতিহ্যের স্বাক্ষর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী পার করলেও তার গায়ে নেই বয়সের ছাপ। চুন সুরকীর গাঁথুনিতে তৈরি মসজিদটিতে মোঘল স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিক ছোঁয়ায় স্পষ্ট সুনিপুণ একটি গম্বুজ, সুগঠিত ছোট চারটি মিনার, আর দেয়ালের অসাধারণ কারু কাজ যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক জীবন্ত কীর্তি।
৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৫ ফুট প্রস্থের এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়নি রড। নেই কোনো পিলার। তবুও যুগের পর যুগ অক্ষত এই মসজিদ। মূল মসজিদের ভেতরে একসঙ্গে তিন কাতারে নামাজ আদায় করা যায়। তবে সময়ের পরিক্রমায় মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকায় মসজিদের সাথে নতুন করে একটি অংশ সংযোজন করা হয়।
এর পাশেই রয়েছে শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। শুধু এবাদত নয় স্থানীয়দের কাছে মসজিদটি এখন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশিল্পের এক অবিস্মরণীয় নিদর্শন।
স্থানীয় একজন বলেন, 'অনেক দূর থেকে অনেক লোকজন এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসতো। অনেক প্রাচীন একটা সমজিদ।'
জনশ্রুতি আছে মোঘল আমলে কোনো এক এলাকা থেকে মুন্সি হয়বতউল্লাহ নামে একজন নড়াইলের গোয়ালবাথান গ্রামে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এখনও মসজিদটি দেখভাল করেন তার বংশধররা।
স্থানীয় একজন বলেন, 'সুদূর কলকাতা থেকেও অনেকে নামাজ পড়তে আসতো। যদিও এখন সেভাবে কেউ আসে না। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসে।'
মুন্সি হয়বতউল্লাহর বংশধর বলেন, 'আমার সে পরদাদা প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তিনি জজ ছিলেন, জমিদার ছিলেন। তিনি প্রতি শুক্রবারে এখানে একটা গরু জবাই করে তাদের একটু আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতেন। মুসল্লিরা নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়িয়ে যেতেন।'
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন এই মসজিদ এখনও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসেনি। তবে ইসলামি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদটি দেখভালের কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
নড়াইল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'সারাদেশে যতগুলো এমন পুরোনো মসজিদ আছে, সবগুলোর লিস্ট করে এগুরো উন্নয়ন এবং দেখভাল করার জন্য, মাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য একটি প্রকল্প আমরা মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছি।'
মোঘল আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দ্রুত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সংরক্ষণ করবে বলে আশা স্থানীয়দের।