শেরপুরে জেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে যেন হাসির শেষ নেই। ইতিমধ্যে সরিষা কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে ১৮ হাজার ৭ শ ৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে ও ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৯ হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে জেলায় উচ্চ ফলনশীল জাতের টরি -৭, বারি সরিষা- ৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭ এর চাষ বেশি হয়েছে। এবছর ২৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ১৮৪ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা।
কৃষকেরা বলছেন, আমন ধান কাটার পর পতিত জমিতে সরিষা চাষ একটি লাভজনক ফসল। জাত ভেদে সরিষা চাষে বিঘা প্রতি খরচ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন ৫ থেকে ৭ মণ এবং মণপ্রতি সরিষার বাজারদর ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। খরচ বাদে বিঘায় লাভ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
সরিষার ক্ষেতের খালি জমিতে শত শত মৌ বক্স স্থাপন করেছিল ভ্রাম্যমাণ মৌচাষীরা। যেখানে প্রায় ১১ হাজার কেজি মধু আহরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
রোপা আমন ধান কাটার সাথে সাথেই আমরা সরিষার চাষ করে থাকি। সরিষা মাড়াই শেষে আমরা বোরো ধান আবাদ করি। এতে ফসলের কোন ক্ষতি হয় না বরং খরচ কম এবং লাভ বেশি।
শেরপুর জেলায় সমতল ভূমির পরিমাণ বেশি। একারণে একি জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করলে জমির উর্বরতা হারায়। সেকারণে জমির উর্বরতা বাড়াতে কৃষকদের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
শেরপুর সদর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম খোকন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কৃষক প্রচুর সরিষা আবাদ করেছে ফলনও বাম্পার হয়েছে এরইসঙ্গে বাজার মূল্য অনেক বেশি। এতে কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।’
কৃষকরা ন্যায্য দাম পেলে একদিকে যেমন সরিষা চাষে আগ্রহী হবে অন্যদিকে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। এছাড়া আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে জেলার কৃষকরা বলে জানান জেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো.হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় শেরপুর জেলার সরিষার আবাদ বেড়েছে। মোট সরিষার আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে। আমরা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছি।’
চলতি বছর শেরপুরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জেলার প্রায় ৫০ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার এবং সরিষা বীজ প্রদান করা হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এবছর যে পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হবে তা জেলার শতকরা ৭০ ভাগ তেলের চাহিদা পূরণ করবে।