সংস্কৃতি ও বিনোদন
0

'আমাদের ভিতরের মহিষাসুর বধ করতে পারলেই নতুন পথ দেখতে পারবো'

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, এদেশের সকল জাতি গোষ্ঠীর সমান অধিকার। আমাদের ভিতরে মহিষাসুর আছে। তাকে বধ করতে পারলে হয়তো আমরা নতুন পথ দেখতে পারবো। সে মহিষাসুরকে, কিভাবে বধ করবো ঐইটা আপনারা নির্ণয় করবেন। ঐইটা আমরা বলে দিতে পারি না। কাজেই বাংলাদেশের জনগণ নির্ণয় করবে আমাদের মহিষাসুরকে এবং কাকে বধ করা দরকার।

তিনি বলেন, 'আমরা সবাই যেন একসাথে বাংলাদেশি হিসেবে বসবাস করতে পারি তার পথটা আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। এটাই প্রকৃত সময়। এই সময়টাকে যদি আমরা হারিয়ে ফেলি তাহলে কিন্তু আর দ্বিতীয়বার এই সুযোগ পাবো না।'

আজ (শনিবার, ৪ জানুয়ারি) বিকেলে নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চরমাগা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'উৎসব মুখর বাংলাদেশ যে আমরা করতে চাই তার ভেতরে ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ সবচাইতে বেশি জরুরি। আমরা চাই গণমুখী শিল্পচর্চা। আমরা চাই শিল্পকলা সমাজের কেন্দ্রে অবস্থিত হোক। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশের বড় একটি অংশ। এ জাতি সংখ্যায় ক্ষুদ্র হতে পারে কিন্তু ক্ষুদ্র বলে তাদের ছোট করার কোন মানে হয় না।'

আপনারা বাঙালিদের পাশাপাশি সমঅধিকার নিয়ে আরো একটা জাতিগোষ্ঠী। এরমধ্যে হাজং সম্প্রদায় অন্যতম। হাজং জাতি গোষ্ঠী টংক বিদ্রোহের মাধ্যমে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পূর্ব পাকিস্তানের ভিত্তি কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। যার অন্যতম নেতৃত্ব দিয়েছে কমরেড মণি সিংহ বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, 'হাজার নদীর দেশে সকল মত, পথ, ধর্ম, বর্ণের এই বাংলাদেশে সংস্কৃতিতে হাজং, গারো, মারমা, চাকমা, সাঁওতাল, বাঙালি সকল জাতি গোষ্ঠীর সমান অধিকার আছে। এই কথা আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে বা আমরা যে আজকে মহিষাসুর বধ পালা করছি তার সাথে চরমাগা অনুষ্ঠান উদযাপন করছি তার ভিতরে আমরা বলতে পারি। তবে আপনাদের দাবি এবং আপনাদের অধিকার আদায় করতে হলে আপনাদের শিক্ষায় দাঁড়াতে হবে। নিজেদেরকে সুশিক্ষিত করতে হবে এবং আপনাদেরকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অধিকার রক্ষা করতে হবে।'

ইতিমধ্যে অনেক কিছুই শেষ হয়ে গেছে। অনেকের জমি শেষ হয়ে গেছে তারপরও আমরা সবাই একসাথে থাকতে পারি বসবাস করতে পারি। আমরা মনে রাখতে চাই আপনারা টংক আন্দোলনের সেই হাজং গোষ্ঠী। এই হাজং জনগোষ্ঠী সব সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যদি পারে তখন কিন্তু আমাদের গর্ব হবে বলে জানান তিনি।

ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, 'এই বাংলাদেশে সংখ্যায় ছোট বড় নানান জাতি মিলে বাংলাদেশ তৈরি করতে পেরেছি। এই চরমাগা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা আশা করি বাঙালি হাজং সকল সম্প্রদায় মাঝে নতুন চিন্তার বীজ বপন হবে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ খুঁজছি সেই খোঁজার পথ পাবো।'

তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সেলের আয়োজনে দুর্গাপুরে সীমান্তবর্তী হাজং পল্লী বগাউড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় চরমাগা উদযাপন উপলক্ষে মহিষাসুর বধ পালা। শনিবার বিকেলে আড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় উৎসব। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের বরণ করে নেন হাজং সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর তাদের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতির নিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন তাদের ঐতিহ্য।

নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অন্যানের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপ-পরিচালক জিয়া উদ্দিন আহমেদ, এস এম শামীম আকতার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকার সুজন হাজং, ডন বসকো কলেজের পরিচালক ফাদার কুচওয়ালিক, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল, চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ হাজং, গাঁও মোড়ল হরিদাস হাজং, কন্ঠশিল্পী অনিমেষ হাজং প্রমুখ।

স্থানীয় বগাউড়া সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় অনুষ্ঠানে মহিষাসুর বধ পালা মঞ্চায়ন করা হয়। এ সময় স্থানীয় শিল্পীরা নিজস্ব সংস্কৃতি এবং নিজস্ব ভাষায় তাদের ঐতিহ্য তুলে ধরেন।

ইএ