১৯৮৬ সালের ২২ জুন। মেক্সিকো সিটির এস্তাদিও অ্যাজটেকায় বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি আর্জেন্টিনা দল। ঠিক আগের দিন আলবিসেলেস্তে শিবিরে দুশ্চিন্তার মেঘ। ফিফা যে জানিয়েছে, আসন্ন ম্যাচে তাদের পরতে হবে গাঢ় রঙের জার্সি।
অবশ্য আর্জেন্টিনা গাঢ় রঙের জার্সি হিসেবে নীল কিট এনেছে ঠিকই। কিন্তু সেটির কাপড় ছিল তুলনামূলক মোটা। মেক্সিকোর তীব্র রোদে যা পরে খেলা রীতিমতো অসম্ভব। আর্জেন্টিনার কোচ কার্লোস বিলার্দো বুঝে গেলেন- এ জার্সি পরে মাঠে নামা মানেই বিপদ।
ঠিক এমন সময় এগিয়ে আসেন ব্যাকআপ গোলকিপার হেক্টর জেলাদার। মেক্সিকো সিটির কুখ্যাত টেপিতো বাজারের খোঁজ জানান তিনি। যেটি মূলত নকল পণ্যের অভয়ারণ্য। উপায় না পেয়ে শেষমেশ সেখানেই ছুটে যান আর্জেন্টিনার দুই কিটম্যান। টেপিতোর সরু গলিতে একেরপর এক দোকান খুঁজে হালকা নীল রঙের জার্সি খুঁজে পান তারা।
আরও পড়ুন:
জার্সিগুলো নকল হলেও গরমে খেলার জন্য আদর্শ ছিল। তাই সেগুলোই নিয়ে আসেন কিটম্যানরা। এরপর হোটেলে ফিরে রাতভর চলে সেলাই, ইস্ত্রি, লোগো লাগানো। আর এভাবেই ম্যাচের আগে তৈরি হয় বিশেষ সেই জার্সি। যা পরে ম্যারাডোনার দল খেলে ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবল ম্যাচগুলোর একটি।
পরদিন অ্যাজটেকার মাঠে নকল জার্সি পরেই নামেন ম্যারাডোনা আর তার দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে সৃষ্টি হয় ফুটবল ইতিহাসের দুই সেরা মুহূর্ত। প্রথমে আসে বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল। আর তারপরই দেখা মেলে ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরির’। নীল রঙের এ নকল কিটই যেন ছিল সেই দিনের নীরব নায়ক।
আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা পরবর্তীতে আর কখনো জার্সিগুলো পরেননি। তবে মাত্র এক ম্যাচের জন্য টেপিতোর সেই নকল জার্সি না এলে হয়তো ম্যারাডোনার কিংবদন্তি হওয়ার গল্পটাও এমন হতো না। অজানা এক গলির দোকান থেকে পরা নকল জার্সির এ ঘটনা যেন মনে করিয়ে দেয়- ফুটবলে প্রতিটি সেলাইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে ইতিহাস।





