ড্রোন আক্রমণ ঠেকাতে তৈরি হচ্ছে এআই নিয়ন্ত্রিত ড্রোন

এআই নিয়ন্ত্রিত ড্রোন
এআই নিয়ন্ত্রিত ড্রোন | ছবি: সংগৃহীত
0

আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের সবচেয়ে আলোচিত ও বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র এখন ড্রোন। ছোট রিকনেসান্স ড্রোন থেকে শুরু করে অ্যাসল্ট ইউনিট। প্রায় প্রতিটি ওয়ার ব্রিগেডেই এখন ড্রোনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তবে তুলনামূলক সস্তা হলেও, ড্রোনের ঝুঁকিও কম নয়। এবার ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ব্যবহার করে ড্রোন ঠেকানোর পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই তৈরি হচ্ছে এআই নিয়ন্ত্রিত ড্রোন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় পাইলট বিহীন আকাশযান বা ড্রোনের ব্যবহার। গেল কয়েক দশকে যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত মনুষ্যবিহীন বিমান। শুরুতে ছোট ড্রোন মোতায়নের প্রচলন থাকলেও এখন প্রায় প্রতিটি যুদ্ধ ব্রিগেডের একটি অ্যাসল্ট ড্রোন কোম্পানি রয়েছে।

সম্প্রতি রোমানিয়ার আকাশসীমার সবচেয়ে গভীরে ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। বুখারেস্টের অভিযোগ রাশিয়ার উস্কানিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এর জবাবে গেল ২৫ নভেম্বর দেশটির সীমান্তের কাছে মোতায়েন করা হয় রোমানিয়ান এবং জার্মান ন্যাটো যুদ্ধবিমান।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ১৩তম বারের মতো রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা এটি। এছাড়া রাতের পরিবর্তে দিনের আলোয় দেশটির আকামসীমায় ড্রোন অনুপ্রেবেশেরও প্রথম ঘটনা।

ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বেঞ্জামিন ওলবা বলেন, ‘এটি যুদ্ধক্ষেত্রকে মৌলিকভাবে বদলে দিয়েছে, বিশেষ করে ২০২২ সালে ইউক্রেনে, রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্টাইলের ট্যাঙ্কগুলি একে অপরকে আক্রমণ করছে। ইউক্রেনের ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত কিছুই টিকে নেই।’

ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে আকাশসীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ান ড্রোনের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। গেল সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত ২০টিরও বেশি রাশিয়ান ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং তিনটি রাশিয়ান সামরিক জেট ১২ মিনিটের জন্য এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে।

আরও পড়ুন:

এরপর থেকে ইউরোপের আকাশজুড়ে বেড়েছে অজ্ঞাত ড্রোনের আনাগোনা। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে অঞ্চলটির আকাশসীমা কার্যক্রম। অজানা এসব ড্রোনের সীমা লঙ্ঘনের জবাব দিতে কোটি কোটি ডলার মূল্যের এফ-৩৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং একটি প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে ন্যাটো।

ড্রোনের এমন বহুল ব্যবহারের অন্যতম কারণ শক্তিশালী এ অস্ত্রটি তুলনামূলক সস্তা। একটি ড্রোনের যন্ত্রাংশের মোট দাম ৫০০ ডলার বা তার কম হতে পারে।

বেঞ্জামিন ওলবা বলেন, ‘আমাদের কাছে খুব সস্তা ফার্স্ট-পারসন ভিউ- ড্রোন রয়েছে যার দাম মাত্র কয়েক শো বা এক হাজার ডলার। যা ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো খুব ব্যয়বহুল, খুব কাস্টমাইজড সিস্টেম তৈরি করে।’

তবে অন্যান্য ধরনের অস্ত্রের সঙ্গে ব্যবহার করলে ড্রোন প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর। শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে কয়েক ডজন আঘাত হানতে সক্ষম রেকর্ডধারী এফপিভি ড্রোন পাইলটরাও জানান, কামান ছাড়া শুধু ড্রোন ব্যবহার করে লড়াই করা কঠিন।

বহুল জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত ড্রোনকে থামানোর উপায়ও রয়েছে। সবচেয়ে কার্যকর উপায় ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) সিস্টেম। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জ্যাম করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। যখন একটি ড্রোনের সিগন্যাল জ্যাম করা হয়, তখন পাইলট ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন ।

আরও পড়ুন:

বেঞ্জামিন ওলবা বলেন, ‘কোয়াডকপ্টার ড্রোনে একটি অ্যান্টেনা থাকে এবং অপারেটরের কাছে ডেটা ফেরত পাঠানোর জন্য একটি রেডিও লিঙ্ক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ রেডিও লিঙ্কটি জ্যাম করা যেতে পারে এবং যোগাযোগ জালিয়াতি করা যেতে পারে। এ রেডিও লিঙ্কগুলির বেশিরভাগই অ্যানালগ এবং এনক্রিপ্ট করা হয় না।’

ইডব্লিউ সিস্টেমের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের জবাবে, ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়ই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত ড্রোন তৈরির পথে হাঁটছে। এ ড্রোনগুলো তাদের পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই তাদের লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত করে এবং লক করে, এতে ড্রোনগুলো জ্যামিংয়ের মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে যেতে পারবে।

দুই দেশ এরইমধ্যে অল্প সংখ্যক ড্রোনে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে ইউক্রেনীয় ড্রোন নির্মাতারা বলছেন প্রযুক্তিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহারের আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। অনেক নির্মাতা এবং পাইলট বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে ড্রোন যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে এআই সিস্টেম থাকতে পারে।

এসএস