বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে অনিশ্চয়তা, জুলাই সনদ স্বাক্ষর ঘিরে দলগুলোর বিভক্ত অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সভা
ঐকমত্য কমিশনের সভা | ছবি: সংগৃহীত
0

আগামীকাল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি থাকলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ না হওয়ায় নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এনিসিপির দাবি- সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঘোষণা না সনদ সই, দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। জামায়াতে ইসলামী বলছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতি স্পষ্ট না করে সই হলে জটিলতা বাড়বে। এদিকে, বিএনপির দাবি, সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমেই দলগুলোর সকল অনিশ্চয়তা কাটবে। দলগুলোর এমন বিপরীতমুখী বাস্তবতাকে সামনে রেখেই সনদ সই অনুষ্ঠানকে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ বলছেন অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

এ প্রশ্নের উত্তরেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ঘিরে অনিশ্চয়তা যে রয়ে গেছে সেটা শিকার করে নিলেন। তবে দলগুলো বরাবরের মত আন্তরিক থাকলে ভবিষ্যৎ কোন সংকটকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘যেকোনো প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তো থাকেই। এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আশা করি সনদের ব্যাপারে ভিন্নমত যেগুলো আছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবে সেগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে লিখা হয়েছে। সুতরাং আমি শঙ্কাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না।’

এনসিপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ নেতার দাবি, বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঘোষণা না করে সনদে সই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। এবং একে সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রতারণাও বলছেন তিনি।

এনসিপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘স্বাক্ষর নিয়ে পরবর্তীতে দেখা গেলো সরকার বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে দিলো। এটি তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাটানির অবস্থা তৈরি করবে। যদি বাস্তবায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা না হয়, এটার ভাষা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে স্পষ্ট করা না হয় তাহলে এটি একটি রাজনৈতিক প্রতারণার মতো হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘বল এখন সরকারের কোর্টে। উনারা ঠিক করবেন যেকোনো ভোট এখন হবে নাকি কখন হবে। আমাদের জানামতে এর বাইরে আসলে কোনোকিছু নেই।’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, কমিশন কর্তৃক চূড়ান্ত সনদকে অস্পষ্ট দাবি করে বলেন, সনদ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো স্পষ্ট না করে স্বাক্ষর হলে নতুন করে রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবে।

আরও পড়ুন:

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘একটা ইউনিফর্ম জায়গায় হয়তো দলগুলো এসে যেতে পারে। তাহলে ক্রাইসিস থামবে। তা না হলে তো একটু জটিলতা হয়ে যাবে। কেউ যদি বলে আমার এইটা না হলে আমি সই করবো না তাহলে এটা তো সমস্যা।’

বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা খন্দকার মোশাররফ বলছেন, সনদে সই হয়ে গেলে রাজনৈতিক জটিলতা কমে আসবে। সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দলগুলোর ভিতর যে আস্থার সংকট আছে সেগুলো কাটবে বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সকল দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে এসেছে। তাই এখানে আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হবে না বলে আমার বিশ্বাস। যখন জুলাই সনদ লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে তখন তো সেটা লিপিবদ্ধ থাকবে সেখানে।

শেষ মুহূর্তে এসেও রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দেখা গেলেও কমিশনের সহ-সভাপতি সনদ সই অনুষ্ঠানকে দেখছেন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ হিসেবে। এ সনদের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করবে বলেও মনে করছেন তিনি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘অতীতের যে তিনটা ঘটনা আমি বললাম সেখানে নব্বইয়ের ঐকমত্য থাকলেও জনগণের আন্দোলনের বাইরে রাষ্ট্রক্ষমতা পাল্টানোর ব্যাপারে বা রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলি নি। আজকে দেখুন আমরা সবাই একসাথে আছি। এ জায়গাটাকে আমি সন্ধিক্ষণ মনে করি।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও সেটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সুরাহা হওয়া সম্ভব। আর এ সম্ভাবনাই জুলাইয়ে ঐক্যকে শক্তিশালী করবে বলে মনে করছে দলগুলো।

ইএ