স্বৈরাচার বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের পর দামেস্কে থাকা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে রোববার এভাবেই উল্লাসে মাতেন হাজার হাজার সিরীয়।
যে যার মতো করে নিয়ে গেছেন বাশার আল-আসাদের ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র। দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি মেলায় খুশিতে মেতেছেন অন্যান্য শহরের বাসিন্দা ও ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বাস্তুচ্যুত মানুষেরা।
সিরিয়ার এক অধিবাসী বলেন, ‘এটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমাদের পুনর্জন্ম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
আরেক অধিবাসী বলেন, ‘আমি বিজয় উল্লাস করছি, কারণ স্বাধীনতা অনুভব করছি। সত্যি আমরা আজ স্বাধীন।’
বিদ্রোহীদের অভিযানে বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার খবরে উল্লাসে মেতেছেন তুরস্ক, জর্ডান, লেবানন, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে থাকা হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত সিরিয়ানরা।
ইতোমধ্যেই দেশে ফিরতে সীমান্তগুলোতে ভিড় করছেন স্বৈরাচার বাশার সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে থাকা মানুষেরা।
আরেক সিরিয়ান বলেন, ‘এই আনন্দ বর্ণনা করার মতো না। কোনো শব্দ দিয়ে এটি প্রকাশ করা যাবে না। ১৪ বছরে এই প্রথম আমরা নিরাপদ বোধ করছি।’
যদিও, বছরের পর বছর ধরে আসাদ প্রশাসনকে এড়িয়ে যাওয়া পশ্চিমারা অবশ্য এখনও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
এমনকি আগামী দিনে তারা কীভাবে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে মোকাবিলা করবে তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। রণ বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল শাম বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে মনোনীত।
এমন পশ্নে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের উপ-সহকারী সেক্রেটারি ড্যানিয়েল শাপিরো বলছেন, পূর্ব সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি থাকবে এবং আইএসের পুনরুত্থান রোধে ব্যবস্থা নেবে তারা।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরন প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-সহকারী সেক্রেটারি ড্যানিয়েল শাপিরো বলেন, ‘যারা এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের নিরাপত্তা সহায়তায় আমরা আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা চালিয়ে যাব। তাদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি আগের থেকে আরও শক্তিশালী। আমরা পূর্ব সিরিয়াতে আমাদের উপস্থিতি বজায় রাখব।’
সিরিয়ার জনগণকে নিজ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক।
সেইসঙ্গে সিরিয়ার জাতীয় ঐক্য, স্থিতিশীলতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘এই ক্রান্তিকালে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী সংগঠন দায়েশ এবং পিকেকে যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে তুরস্ক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত সংখ্যালঘু, অ-মুসলিম, খ্রিষ্টান ও কুর্দিদের সাথে সমানভাবে আচরণ করা উচিত।’
অন্যদিকে, রাজনৈতিক ব্যর্থতায় বাশার আল আসাদের পতন হয়েছে বলে মনে করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কূটনৈতিক উপদেষ্টা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘আমাদের গভীরভাবে নজর রাখতে হবে। বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যায় কিনা তা নিয়েও খুব চিন্তিত। বিশেষ করে চরমপন্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। এছাড়া সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়েও চিন্তিত।’
এদিকে বাশার আল আসাদের অন্যতম মিত্র রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গেইর পেডারসেনের সাথে দেখা করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, সিরিয়ার বিদ্রোহীগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামকে সম্ভাব্য সব উপায়ে বিরোধিতা করে যাবে মস্কো।
প্রেসিডেন্ট আসাদ পালালেও সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি তার বাসভবনেই অবস্থান করছেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
সরকার বিরোধী বিদ্রোহীরা তাদের অভিযানে সফল হওয়ার পরও প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।