প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররমের খতিব আবদুল মালেক, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার এবং হেফাজতে ইসলামের সাজেদুল হকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি ও বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিনিধি।
ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, 'আজকে বসলাম এ জন্য, পত্রপত্রিকায় দেখছি- মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে বসা।'
সরকার গঠনের আগে বিমানবন্দরে দেয়া বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'তখন আমি বলেছিলাম আমরা একটি পরিবার। আমাদের নানা মত, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এটাতে জোর দিয়েছিলাম। আমাদের শত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই। আমাদের জাতীয়তা, পরিচয়ের প্রশ্নে এক জায়গায় চলে আসি। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের সদস্য।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'শপথ গ্রহণের পরে শুনতে আরম্ভ করলাম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল। এর পরপরই আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলাম। সেখানেও বললাম আমরা একই পরিবারের সদস্য। সব দাবিদাওয়া বাদ দিলেও একটা দাবি পরিষ্কার- আমাদের সকলের সমান অধিকার, বলার অধিকার, ধর্মের অধিকার, কাজকর্মের অধিকার। সেটা এসেছে সংবিধান থেকে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা। শুনলাম এখনও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে বসলাম এটা থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়।'
দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'সেটা পুরো জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। তখন তৃপ্তি পেলাম একটু তো কাজ করেছি।'
ড. ইউনূস বলেন, 'এখন আবার নতুন কথা, হামলা হচ্ছে, অত্যাচার শুরু হচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যম বলবো না, প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে এটা হচ্ছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি, কী হচ্ছে? সব দিকে দেখলাম এটা হচ্ছে না। এক খবরে বলা হচ্ছে, আরেক খবরে বলা হচ্ছে হচ্ছে না- তথ্যের মধ্যে ফারাক আছে। এটা ঠিক না। এটার অবসান হতে হবে। আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা ভুল হতে পারে। তথ্যের ওপর বসে থাকার কিছুই নাই, এটার অর্থ অন্ধের মতো বসে থাকা। ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। খোঁজ নিতে হবে তথ্যের গরমিল কেন? তাতে ওরা যা বলছে, তা কী মিথ্যা প্রচার? না আমরা যা বলছি তা মিথ্যা প্রচার। সত্যটা কোথায়?'
তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্যের কোনো ফারাক নেই। সেখানে সঠিক তথ্য কীভাবে পাবো, সেটা আমাদের জানার। প্রকৃত তথ্য, অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কর্তা যা চাই সেভাবে বলে। আসলটা মনখুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এতবড় দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যাতে সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই হোক দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'প্রথম কথাটা হলো, না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। আমি যা বলছি, তা দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে। আমরা এক পরিবারের মানুষ হিসেবে সামগ্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। সেখানে তথ্য ও প্রতিকার হল বড় বিষয়।'
তিনি বলেন, 'আমি পেলাম তথ্য কিন্তু প্রতিকার পেলাম না। সমস্যা হয়ে গেলে সমাধান করতে হবে। আজকের আলোচনা খোলাখুলি, আমরা সবাই আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্যে কোনো গোলমাল নেই। তথ্যপ্রবাহ কীভাবে পাবো, দোষীকে কীভাবে ধরব। যাতে সবাই সঠিক তথ্যটা পেয়ে যায়। এমন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যার নাম দিয়েছি নতুন বাংলাদেশ। এটা আমাদের করতে হবে। আপনাদের কথা বলে সন্তুষ্ট করে আজকের মত বিদায় দিলাম তা নয়। এটা দ্রুত করতে হবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দেখলে হবে না, আমাদের বর্তমানেই করতে যেতে হবে।'
বৈঠকে সংখ্যালঘু সমস্যার বিষয়ে অবাধ, সত্য তথ্য কীভাবে সংগ্রহ করা যায়- সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চান প্রধান উপদেষ্টা।