ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর অভিযানে হিজবুল্লাহর সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পরও থামছে না লেবাননে ইসরাইলের হামলা। শনিবারও আইডিএফ'এর হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ইসরাইলের বিমান দিয়ে লেবাননে সমানে ছোড়া হচ্ছে বোমা।
নাসরাল্লাহ'র মৃত্যু যেন মেনে নিতেই পারছেন না লেবাননের সাধারণ মানুষ। একপক্ষ শোক আর নিন্দা জানালেও আরেক পক্ষ বলছে, এটা ইসরাইলের কোন চালাকি, নাসরাল্লাহ এভাবে মরতে পারে না।
ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ রইলো না, ছড়িয়ে পড়লো পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে লেবানন, জর্ডান, পশ্চিমতীর, তেল আবিবসহ বিভিন্ন স্থানে।
লেবাননের সাধারণ মানুষের মধ্যে একজন জানান, আমার মন বলছে- নাসরাল্লাহ মারা যাননি। এটা কোনো চালাকি। তার মাথা কম্পিউটারের মতো কাজ করতো। তিনি জানতেন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে।
লেবাননের সাধারণ মানুষের মধ্যে আরেকজন জানান, দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। তবে এভাবেই চলে আসছে, প্রভাবশালী কোনো নেতার পতন হলে আরেকজন দাড়িয়ে যায় দেশ রক্ষায়।
এই ঘটনায় লেবাননে ঘোষণা করা হয়েছে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। ইরান ঘোষণা করেছে ৫ দিনের শোক। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ অবশ্যই নেয়া হবে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, এই নেতা মধ্যপ্রাচ্যে এতো প্রভাবশালী ছিলেন যে, তার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি আরও বলেন, 'নাসরাল্লাহ এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ইরানেও তার যথেষ্ট গুরুত্ব ছিলো । তার অনুপস্থিতিতে এই শূন্যতা পূরণ করা খুব কঠিন হবে। হিজবুল্লাহ কিংবা ইরান, দুই পক্ষের জন্যই নাসরাল্লাহ'র মৃত্যু বড় ক্ষতি।'
যদিও এই হত্যাকাণ্ডের পরও গাজার পাশাপাশি লেবাননেও চলছে ইসরাইলের সেনা অভিযান। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, একজন হত্যাকারীকে নির্মূল করেছে ইসরাইল। সেইসঙ্গে এই অর্জনকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোন স্থান নেই যেখানে ইসরাইল পৌঁছাতে পারে না।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, নাসরাল্লাহ শুধু সন্ত্রাসী ছিলেন না, তিনিই সন্ত্রাসী ছিলেন। তার সঙ্গীদেরই পরিকল্পনা ইসরাইলকে ধ্বংসের। ইরানই তাকে পরিচালিত করছিলো। আমাদের লক্ষ্য অর্জনে নাসরাল্লাহ'র মৃত্যু জরুরি ছিল। এখন ইসরাইলের উত্তরে সাধারণ মানুষ ফিরতে পারবে। এই অঞ্চলে বহু বছর পর ক্ষমতায় পরিবর্তন আসবে। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে বলতে চাই, আমাদের ওপর যেই হামলা করবে, আমরাও পাল্টা হামলা করবো।
ইসরাইলের এই বেপরোয়া অব্স্থানের কারণে মিশর বলছে, মধ্যপ্রাচ্যকে নরকে পরিণত করার দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে ইসরাইল।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্দ আব্দেলাত্তি বলেন, 'ইসরাইলের আগ্রাসন বিপজ্জনক, এর কোন সীমা নেই। পুরো অঞ্চলকে নরকে পরিণত করছে ইসরাইল । লেবাননে যা হচ্ছে, নিন্দনীয়। যুদ্ধের যে মেশিন ইসরাইল চালু করেছে আমাদের সেটা বন্ধ করতে হবে । আন্তর্জাতিক সব নীতি ভঙ্গ করছে ইসরাইল।'
এমন অবস্থায় বারবার যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরকে মুখে গুরুত্ব দিয়ে আসলেও নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেছেন, এই ঘটনায় ন্যায়বিচার হয়েছে। তবে গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধবিরতি চান বাইডেন।
এদিকে লেবাননে হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে কোন বিকার নেই ইসরাইলের সাধারণ মানুষের। তারা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ, তাই হিজবুল্লাহর ওপর হামলা করতেই হবে, তবে আগে বন্দিদের মুক্ত করতে হবে।
লেবাননে এখনও অব্যাহত আছে ইসরাইলের হামলা। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, লেবাননের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২ লাখ মানুষ। সিরিয়ায় চলে গেছেন আরও ৫০ হাজার। লেবাননের হাসপাতালগুলোতে নেই তিল ধারণের জায়গা। বিশ্লেষকদের শঙ্কা, অপ্রতিরোধ্য ইসরাইলকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোন পদক্ষেপ না নিলে আরেকটি গাজায় পরিণত হতে পারে লেবানন।