ইসরাইলি বাহিনীর নারকীয় হামলায় দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে গাজার মূল ভূখণ্ড। উপত্যকাটির পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে অধিকৃত পশ্চিমতীর।
বৃহস্পতিবারও এখানকার জেনিন, তুলকারেমে শরণার্থী শিবিরে রাতভর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় আইডিএফ। এরপরপরই জেনিন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ইসরাইলি বাহিনী। তবে, রয়ে গেছে ধ্বংসস্তূপ।
গাজাবাসীদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমাদের আপনজন এখনও গাজায় । আগে জানতাম অনেকে জীবিত, এখন তারা ফেরত আসলো কফিনে । জীবিতদের দ্রুতই ঘরে ফেরাতে হবে।'
১০১ জন এখনও গাজায় বন্দি । ৩৩৫ দিন হয়ে গেছে। নরক থেকে তারা মুক্তি পায় নি। এই সরকারকে চুক্তিতে আসতেই হবে বলেও জানান একজন।'
গাজাবাসীদের মধ্যে আরো একজন বলেন, 'সবাই পালিয়েছিলো। আমি পালাতে পারিনি কারণ আমি বিকল । এরপর বাড়ির পেছনে বিকট শব্দ শুনি। সব ধ্বংস করে দিয়ে যায় তারা।'
গাজা উপত্যকার দক্ষিণ, মধ্য আর উত্তরাঞ্চলে হামলায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। রাতভর রাফা আর গাজা সিটিতে হামলা চালিয়েছে আইডিএফ।
এদিকে দেইর আল বালাহ'র হাসপাতাল প্রাঙ্গণেও হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা, যেখানে তাবু টানিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছিলো।
জাতিসংঘ বলছে, আগস্ট থেকে গাজার মধ্য আর দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ করতে না পারায় ঝুঁকিতে পড়েছেন এখানকার ১০ লাখ বাসিন্দা।
শুধু গাজায় নয়, লেবানন সীমান্তেও থেমে থেমে চলছে উত্তেজনা। ইসরাইলের দাবি, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে অস্ত্রের ডিপোতে হামলা চালিয়েছে তারা।
এ অবস্থায় গাজার নির্মম হত্যাযজ্ঞ বন্ধ আর ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা ইসরাইল। তেল আবিবে প্রতীকি কফিন নিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক লাখ বাসিন্দা। বন্দিদের ফিরিয়ে আনা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখনও গাজায় বন্দি আছে ইসরাইলিসহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক নাগরিক।
ইসরাইলি নাগরিকদের মধ্যে একজন জানান, শরণার্থী শিবির খালি করার নতুন উপায় খুঁজে বের করেছে তারা। এই শিবিরগুলোতেতারা কাউকে থাকতে দিতে চায় না । এভাবে হামলা করলে সবাই পালাবে।
উত্তপ্ত এই পরিস্থিতিতেও যখন কোনভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর নিয়ে একমত হতে পারছে না হামাস কিংবা ইসরাইল, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির ৯০ শতাংশ শর্তই সমঝোতার পথে। যদিও মিশর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে এখনও মতবিরোধ রয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
যদিও ফক্স নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্লিংকেনের মন্তব্যে পানি ঢেলে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হোয়াইট হাউজের তথ্য সঠিক নয়।
এদিকে চলমান এই সহিংসতার মধ্যেই গাজায় শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের পোলিও টিকাদান কর্মসূচি।
টিকা দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার খান ইউনিসের শিশুদের। যদিও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পোলিও টিকা দিতে সহযোগিতা করছে না ইসরাইল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলায় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।