এশিয়া
বিদেশে এখন
0

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ২১ সেপ্টেম্বর

সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ২১ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে আবারও শক্তিশালী করে নতুন ভবিষ্যতের আশায় শ্রীলঙ্কাবাসী। আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ছেলে। স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তাদের সবারই লক্ষ্য দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দুই বছরেই যেন অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরইমধ্যে, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও নীতিগত পদক্ষেপের ফল পেতে শুরু করেছে দেশটি। সরকারি ব্যয় কমিয়ে বেড়েছে রাজস্ব আয়। রদবদল আনা হয় ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। বিশ্লেষকদের মতে, লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে লঙ্কানদের। আর তাই সবার চোখ আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় দেশটির সাধারণ নির্বাচনের দিকে।

প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রায় ২০ জন প্রার্থী। দেশটির নির্বাচন কমিশন বলছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাই এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের প্রধান লক্ষ্য।

নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এল. রথনায়েকে বলেন, '২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়ন গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর।'

এই যখন অবস্থা, তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের বড় ছেলে ৩৮ বছর বয়সী নামাল রাজাপাকসে। পোদুজানা পেরামুনা দল থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন তিনি। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা তার চাচা বাসিল রাজাপাকসে। দেশটির গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ৯২ জন সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নামাল।

নামাল রাজাপাকসে বলেন, 'আমি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। দেশের এই সংকটে তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন। দলের সমর্থন ও নীতিতে আমার পূর্ণ আস্থা আছে। তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করবে আমাদের দল।'

দুই বছর আগে দেউলিয়া হওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহে। এবার তিনি স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়বেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা এবং অনুরা কুমারা দিসানায়েক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তিন প্রার্থীর মধ্যেই হবে মূল লড়াই।

কয়েক দশকের মধ্যে ২০২২ সালে সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া হয়ে যায় দেশটি। আকাশসম মূল্যস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়ে লঙ্কানরা। আইএমএফের ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তায় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দেশটি।

গত জুন মাসে ৫৮০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধে একটি সমঝোতায় পৌঁছায় শ্রীলঙ্কা। চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় ঋণের কিস্তি ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আর ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেড়েছে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত। অথচ এই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপির খাতায় ঢুকে গিয়েছিল দেশটি।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার পরিশোধযোগ্য বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৯ শতাংশ। ২০২৭ সালে তা সাড়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটির সরকার। দুই বছরে মুদ্রাস্ফীতি ৭০ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে লঙ্কান রুপি। চলতি বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সংকটে ২০২২ সালে জনগণের তোপের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালনের জন্য বেছে নেয়া হয় দেশটির প্রবীণ রাজনীতিবিদ ৭৫ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহকে।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর