গাছের সঙ্গে মানুষের প্রেম সেই আদিকাল থেকেই। গাছ যেমন পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখে তেমনি পরিবর্তন আনে মানুষের মনোজগতেও। তাইতো পাড়ার নার্সারি থেকে মেলা যেখানেই গাছের খোঁজ পান সেখানেই ছুঁটে যান বৃক্ষপ্রেমিরা।
'বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ' শিরোনামের প্রতিপাদ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে গত ৫জুন মাসব্যাপী শুরু হয় জাতীয় বৃক্ষমেলা। ১২১ টি স্টলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি এবারের মেলায় অংশ নেয়। মেলাজুড়ে ছিল দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধক গাছের পসরা।
মেলায় আসা ক্রেতারা বলেন, বৃক্ষমেলার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় গাছ কেনার পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় দেশিয় নানা গাছ চেনার সুযোগ পেয়েছেন তারা।
দর্শনার্থীদের একজন বলেন, 'বিশেষ করে স্কুল- কলেজে বৃক্ষমেলার প্রচার করা উচিত। এতে বাচ্চারা আগ্রহী হবে।'
বৃক্ষমেলার মতো এমন আয়োজন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার কথাও জানান ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। তবে মেলায় শেষ দিকে দাম কিছুটা কমলেও পুরো মেলাজুড়ে দাম নিয়ে ছিল ক্রেতাদের অভিযোগ।
ক্রেতাদের একজন বলেন, 'যে তাপমাত্রা হচ্ছে এইটা কমানোর জন্য আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।'
আরেকজন বলেন, 'এই মেলাটা শুধু ঢাকা না দেশের ৬৪টি জেলাতেই আয়োজন করা উচিত।'
মেলায় ২০টাকা মূল্যের গাছ যেমন ছিল তেমনি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দামের গাছও ছিল স্টলে। তবে বিদেশি প্রজাতির গাছের দাম ছিল চড়া। মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন,পুরো আয়োজন ছিল জমজমাট, বেচাকেনা হয়েছে গতবছরের চেয়ে বেশি। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে দেশিয় ফলদ উদ্ভিদ। পাল্লা দিয়ে বিক্রি হয়েছে নানা জাতের ফুল ও শোভাবর্ধক গাছও।
বিক্রেতাদের একজন বলেন, 'বিক্রি ভালো হয়েছে তবে আমাদের মন মতো হয়নি কারণ প্রথম দিকে বিক্রি কম হয়েছে ঈদ থাকায় তবে শেষের দিকে ভালো বিক্রি হয়েছে।'
আরেকজন বলেন, 'আশে পাশে যেসব নার্সারি আছে আমাদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে গিয়ে গাছ কিনতে যায়।'
বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর অসহনীয় তাপমাত্রায় গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে মানুষ। ফলে গাছ কিনতে মেলাপ্রাঙ্গণ ছিল ক্রেতায় মুখর।
বন অধিদপ্তরের সমাজবিজ্ঞানী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, 'দেশব্যাপী যে তাপমাত্রা ছিল তাতে মানুষ বুঝতে পেরেছে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা কত। বিশেষ করে ঢাকা শহরে যে তাপমাত্রা পার্থক্য দেখা গিয়েছে তাতে মানুষ গাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকেছে।'
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শাহ-আলম বলেন, 'বিশেষ করে ঢাকা শহরে ছাদ বাগান যারা করে তারা ছাদের উপযোগী গাছ নিয়েছে।'
এবারের মেলায় ১২১ টি স্টল থেকে ৩০ লাখের বেশি চারা গাছ বিক্রি হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।