চুক্তির পর দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, নিজেদের ইচ্ছাতেই একীভূত হয়েছেন তারা। সেখানে তারা যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু দুটোই বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত একটি প্রক্রিয়ায় রয়েছে সেখানে তারা যদি একইসঙ্গে মার্জারে যায় তাহলে দুটি ব্যাংকই সুবিধা পাবে।
সেইসঙ্গে তারা নিশ্চিত করেছেন, একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। গ্রাহকদের বিষয়গুলো নিয়ম অনুযায়ীই চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে, দুটো ব্যাংকের যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও ঠিকঠাক থাকবে।
তারা জানান, একীভূত হওয়ার আগে ব্যাংকগুলো নিজেদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা করে। সেখানে তারা দুই ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক উথ্থাপন করেন। তারই প্রেক্ষিতে নিজেদের সক্ষমতা পর্যালোচনা করে বিডিবিএল সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ মনে করে, ডিবিবিএল এর আমানত ও সম্পদ সূচকসহ তিনটি সূচক ইতিবাচক, পিছিয়ে আছে খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে। যা সোনালী ব্যাংক নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারবে।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছিল, অন্যান্য সূচক ঠিক থাকলে শুধুমাত্র খেলাপি ঋণের সূচকেই যদি পিছিয়ে থাকে তাহলে একীভূত হওয়ার প্রয়োজন কেন হলো?
এই প্রশ্নের জবাবে বিডিবিএল এর চেয়ারম্যান শামীমা নারগিস জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে নিয়ম দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আগামী ছয়মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণের ১৫ শতাংশ অর্থ তুলে আনা সম্ভব নয়। আবার পুণরায় এখানে বিনিয়োগ করাও সম্ভব নয়। যদি সেটি সম্ভব না হয় তাহলে জোর করেই অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে। সেটি বিডিবিএলের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। সেজন্য তারা নিজেরাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিডিবিএলের এই মুহুর্তে ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপী রয়েছে। তবে বাজেট ঘাটতি ও মূলধনে কোন নেতিবাচক ধারায় নেই। সম্পদের অনুপাতে সোনালী ব্যাংকের বিজনেস ভলিয়ম ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে বিডিবিএলের মাত্র ৩২শ' কোটি টাকা। আর সোনালী ব্যাংকের লোন অ্যাসেট প্রায় ১শ' কোটি টাকা-যার বিপরীতে বিডিবিএলের ২৭শ' কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংক সংস্কারের পদক্ষেপ হিসেবে বেশ কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক প্রথমবারের মতো একীভূত হওয়ার চুক্তি সই হয়।
তবে আরও কয়েকটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসরকারি একটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং অপর একটির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার কথা শোনা গেছে।