দেশে এখন
0

নানা সংকটে কুমিল্লা অঞ্চলের রেল, বন্ধ ১৬ স্টেশন

জনবল ও ট্রেন সংকটে ধুঁকছে কুমিল্লা অঞ্চলের রেল। গত কয়েক বছরে লাকসাম থেকে নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও আখাউড়া রেলপথে ১৬টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ স্টেশনের আশপাশ দখল করে গড়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পাঁচটি স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হলেও ধুঁকছে জনবল সংকটে। তবে পূর্বাঞ্চল রেল বলছে দ্রুত চালু করা হবে স্টেশনগুলো।

ধুলো জমেছে টেলিফোনে। যন্ত্রাংশে ধরেছে জং। দখল, দুষণে রেললাইন এবং স্টেশন প্ল্যাটফর্ম। প্রবেশমুখে সিএনজি চালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। ডান পাশে মাছের আড়ৎ এবং বাম পাশে মাছ, মাংস, সবজি ও ফলমূলের খুচরা বাজার। সবই রেল স্টেশন দখল করে। বলছি কুমিল্লার লাকসাম দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কথা। মালামাল ও যাত্রী উঠানামায় দিনরাত সরগরম থাকা এক সময়ের দৌলতগঞ্জ স্টেশনের সব কক্ষে এখন ঝুলছে তালা। স্টেশনের এমন ভগ্নদশায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

বন্ধ স্টেশনের আশপাশ দখল করে গড়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ছবি: এখন টিভি

যাত্রীদের একজন বলেন, 'এই স্টেশনের যে ডাবল রেললাইন ছিল সেটা পর্যন্ত দখল করে ফেলেছে অবৈধ দখলদাররা।'

আরেকজন বলেন, 'এখন এই স্টেশন যাত্রীদের ভিড়ের বদলে দেখা যায় মাদকের সেবকদের ভিড়।'

এদিকে লাকসাম-নোয়াখালী এ রেলপথের নাথেরপেটুয়া রেলওয়ে স্টেশনটিও বন্ধ হওয়ার পথে। প্ল্যাটফর্ম দখলে নিচ্ছে মার্কেট কিংবা খাবার হোটেলসহ নানান ব্যবসা। বৃষ্টির পানি যাত্রী ছাউনি চুয়ে পড়ছে। তবে এখানে মাস্টার থাকলেও তিনি অনেকটাই অসহায়। উপকূল এক্সপ্রেস নামে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকলেও নেই টিকিটিং ব্যবস্থা। বিনাটিকিটে যাত্রী বহনে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এ পথের দশটি স্টেশনেরই প্রায় একই অবস্থা। দৌলতগঞ্জ, খিলা, বিপুলাসার, মাইজদী, হরিনারায়নপুর ও বজরা বন্ধ রয়েছে কাগজে-কলমে। এ পথের যাত্রীরা বলছেন, ট্রেন সংকটেই একে একে বন্ধ হচ্ছে স্টেশনগুলো। ট্রেন সংকট কাটিয়ে স্টেশনগুলো পুনরায় চালুর দাবি তাদের।

যাত্রীদের আরেকজন বলেন, 'আমরা চাচ্ছি বন্ধ স্টেশনগুলো চালু হোক তাহলে এই এলাকার যাতায়াতের সুবিধা হবে।'

শুধু লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথ নয়। কুমিল্লা অঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ১৬টি রেল স্টেশন। এসব স্টেশনে লোকাল কিংবা আন্তঃনগর কোন ট্রেনেরই যাত্রা বিরতি নেই।যেমন ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন। দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকা। নির্মাণের ছয় বছরেও যাত্রী সেবায় আসতে না পারায় পরিণত হচ্ছে পরিত্যক্ত ভবনে।

কুমিল্লা অঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ১৬টি রেল স্টেশন। ছবি: এখন টিভি

একই দশা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আলীশ্বর ও নাওটি স্টেশনেরও। ভিআইপি গেস্ট রুম, হলরুম, সিগন্যালিং রুম ও স্টেশন মাস্টারের কক্ষসহ ৫ কক্ষ বিশিষ্ট এমন সুন্দর ও আধুনিক স্টেশন সচরাচর দেশের কোথাও চোখে পড়ে না। পাশাপাশি অনেকটা দোতলা ভবনের মতো দেখতে নান্দনিক ফুটওভার ব্রিজও রয়েছে।

কুমিল্লার মানবাধিকার কর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, 'চাঁদপুর, নোয়াখালী অঞ্চলে ট্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা যতটা উন্নয়নের কথা ছিল তা হয়নি।'

লাকসাম থেকে চাঁদপুর ও নোয়াখালী রেলপথের স্টেশন বন্ধে জনবল ও ট্রেন সংকটের কথাই বলছেন রেল কর্তৃপক্ষ। দেশে নতুন ইঞ্জিন আসলেই ট্রেন ও জনবল সংকট কাটিয়ে আবারো চালু হবে বন্ধ স্টেশনগুলো।

কুমিল্লার রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, 'এরইমধ্যে বেশকিছু ইঞ্জিনের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো আসলেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে এই রুটে।'

পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, 'তাদের জনবল সংকট রয়েছে। নতুন লোকবল ও সহকারী স্টেশন মাস্টারদের প্রশিক্ষণ শেষেই গুরুত্ব বুঝে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা অঞ্চলের বন্ধ সব স্টেশন চালুর ব্যবস্থা করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'লোকবল নিয়োগ চলমান আছে। নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পরে তারা ট্রেনিংয়ে যাবে। এরপর যোগদান করবে স্টেশনগুলোতে। গুরুত্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে স্টেশনগুলো চালু করা হবে।'

একইসঙ্গে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে চাঁদপুর ও নোয়াখালী রেলপথের জরাজীর্ণ স্টেশনগুলোকেও সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর দাবি যাত্রীদের।

ইএ