আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

সমন্বয়হীনতা ও ছাড়পত্র না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

আইনের সমন্বয়হীনতা, বিভিন্ন নীতিমালার সাংঘর্ষিক অবস্থান ও দপ্তরে দপ্তরে ছাড়পত্রের অপেক্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য। এই জটিলতার কারণে বন্দর থেকে পণ্যের খালাস এবং উৎপাদিত পণ্য সরবরাহে তৈরি হয় দীর্ঘসূত্রিতা। এই অবস্থায় সব আইন, নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে ‌‌'জাতীয় লজিস্টিক নীতি-২০২৪' প্রনয়ন করেছে সরকার।

খালাসের জন্য অপেক্ষা করছে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য বোঝাই কন্টেইনার। মিনিট কিংবা ঘণ্টা নয়, পণ্য খালাসে সময় গুণতে হয় কয়েকদিন। চট্টগ্রামের বন্দরের এমন চিত্র রোজকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি পণ্যের চালান খালাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই গড়ে ১১ দিন ৬ ঘণ্টা ২৩ মিনিট সময় লাগে। বেনাপোলে লাগে ১০ দিন ৮ ঘণ্টা এবং ঢাকার বন্দরে ৭ দিন ১১ ঘণ্টা।

বন্দরে পণ্য আসার পর চালান পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মূল্যায়ন, শুল্ক-কর পরিশোধ এবং পণ্য খালাস করে নেয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপে নানা ধরনের নীতিগত জটিলতায় পড়তে হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কিংবা দপ্তরের নানা ধরেণের ছাড়পত্র জোগাড় করতে করতেই দিনের পর দিন বন্দরে পড়ে থাকে পণ্য বোঝাই কন্টেনাইর। এতে বেড়ে যায় সময়, বেড়ে যায় পণ্যের দাম।

তাই আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ করতে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো 'জাতীয় লজিস্টিক নীতি-২০২৪' প্রণয়ন করেছে সরকার। আজ (বৃহষ্পতিবার, ২মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই নীতির অবহিতকরণ সভা। সভায় অংশ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরা বলেন, পণ্য খালাসের জটিলতা নিরসনের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে স্বল্প ব্যয়ে দেশীয় উৎপাদিত পণ্য পৌছে দিতে হবে সারাবিশ্বে। তাই জাতীয় লজিস্টিক নীতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তারা।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, 'দ্রুততম সময়ে স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদিত পণ্য সারাবিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।'

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রনোদনা চায় না ব্যবসায়ীরা। বরং তারা চায় সময় এবং ব্যয়ের সাশ্রয়। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সরকারের নতুন এই লজিস্টিক নীতি বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণ করাবে। তৈরি হবে নতুন কর্ম সংস্থান। ভূমিকা রাখবে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'ব্যবসায়ীরা প্রনোদনা চায় না, বরং ব্যবসার খরচ ও সময়ের সাশ্রয় চায়।'

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, 'টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে জাতীয় লজিস্টিক নীতি, তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণ করাবে এই লজিস্টিক নীতি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, জাতীয় লজিন্টিক নীতি প্রনয়নের কারণে বহুমাত্রিক ও বহুমুখী পরিবহণ ব্যবস্থা অপচয় কমাবে। সমন্বয় হবে নৌ, রেল, সড়ক ও আকাশপথে।

তিনি বলেন, 'অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরিতে জাতীয় লজিস্টিক নীতি-২০২৪ প্রনয়ণ করেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যলয়ের নির্বাহী সেল। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র তৈরি করতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে এই নীতি। নৌ, রেল, সড়ক ও আকাশপথে সমন্বয় হবে। বহুমাত্রিক, বহুমুখী পরিবহন ব্যবস্থা অপচয় কমাবে।'

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, জাতীয় লজিস্টিক নীতি-২০২৪ এর আওতায় থাকবে ১১৯টি কার্যক্রম। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সংস্কারের প্রয়োজন হবে ৬২টি আইন ও নীতিমালার।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর