গেল বৃহস্পতিবারই ৩৪ বছরের সর্বোচ্চ দরপতনে প্রতি মার্কিন ডলার বেচাকেনা হয়েছে ১৫৫ ইয়েনে। চারদিনের মাথায় এ অঙ্ক ছাড়ালো ১৬০। দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকা ইয়েন আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরাচ্ছে জাপানের সাধারণ ভোক্তা থেকে শুরু করে উৎপাদন ও বিভিন্ন সেবা খাতে জড়িত ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। নিত্যপণ্য কেনা থেকে শুরু করে বিদেশ ভ্রমণ, প্রভাব এড়ানো যাচ্ছে না কোনোদিক থেকেই।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'আমার প্রতিদিন যা দরকার হয় বাজারসদাই থেকে শুরু করে জ্বালানি তেল, সবই একটু একটু করে দাম বাড়তে বাড়তে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।'
আরেকজন বলেন, 'এতোদিন পর্যন্ত বছরে একবার হলেও বিদেশ ভ্রমণ করেছি। করোনা মহামারি শেষে খুশি ছিলাম আবারও দেশের বাইরে যেতে পারায়। কিন্তু ইয়েনের বর্তমান অবস্থায় বিদেশযাত্রা কঠিন হয়ে গেছে।'
সোমবার সরকারি ছুটির দিনে জাপানের বাজার বন্ধ থাকলেও এশিয়ার অন্যান্য দেশে সকালের লেনদেনে ডলারপ্রতি বিনিময়মূল্য বেড়ে ১৬০.০৩ ইয়েনে দাঁড়ায় যা ১৯৯০ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। এমন পরিস্থিতি জাপানের সামগ্রিক অর্থনীতি সংকটজনক হলেও সস্তায় পণ্য কিনতে পেরে উচ্ছ্বসিত বিদেশি পর্যটকরা। বিদেশি নাগরিকরা উদারহস্তে ডলার খরচ করলেও চাপে স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের একজন বলেন, 'হোটেল, পরিবহন, রেস্তোরাঁ- সব জায়গায় সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। জাপানে অবস্থানরত বিদেশি পর্যটকদের কাছে সব সস্তা হলেও আমাদের জন্য ভীষণ ব্যয়বহুল।'
ইয়েনের অস্থিরতা গুরুতর রূপ নিতে পারে বলে বারবার সতর্ক করলেও মুদ্রা শক্তিশালী করতে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়নি জাপান প্রশাসন। গেল মাসে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণাত্মক সুদ নীতির অবসান ঘটানোর পর থেকেই কমতে কমতে ডলারের বিপরীতে ১৫০ এর নিচে নেমে আসে ইয়েনের দাম। এ অঙ্ক ১৫৫ ইয়েনে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় মুদ্রার আরও দরপতন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী হলেও কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়াই পেরিয়ে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ।
জাপানের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় গবেষক সুতোমু নাকামুরা বলেন, 'মার্কিন অর্থনীতি এই মুহূর্তে বেশ শক্তিশালী। মার্কিন ডলারও শক্তিশালী হচ্ছে। এ কারণেই ইয়েন দুর্বল হচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতি গতি না হারালে ইয়েনের এই দুর্বলতা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।'
এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রতি ডলারে ১৪৬ ইয়েনের নিচে দরপতনেই বাজার থেকে ইয়েন কেনার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিল জাপান সরকার। ডলারের বিপরীতে পতনের পাশাপাশি ইউরোর বিপরীতেও রেকর্ড দর হারিয়েছে ইয়েন। জাপানি মুদ্রায় প্রতি ইউরোর দাম ১৭১ ইয়েন চলছে যা ১৯৯৯ সালের ইউরোপের কেন্দ্রীয় মুদ্রাব্যবস্থা চালুর পর সর্বনিম্ন।