দেশে এখন
0

'মুক্তিপণ গোপনীয় বিষয়, প্রকাশ করা যাবে না'

চুক্তি থাকায় কত টাকা মুক্তিপণে এমভি আবদুল্লাহ'র নাবিকরা ছাড়া পেলেন তা প্রকাশ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ এসআর শিপিং। ১৯ থেকে ২০ এপ্রিল জাহাজটি দুবাই পৌঁছাবে। তারপরই জানা যাবে তারা কবে দেশে ফিরবে। এদিকে নাবিকরা মুক্তি পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে তাদের স্বজনদের মাঝে।

৩১ দিনের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হলো বাংলাদেশি জাহাজ এম ভি আব্দুল্লাহ ও জিম্মি ২৩ নাবিক। অনেকটা সিনেমার গল্পের মতো নানা নাটকীয়তায় ভরপুর এই উদ্ধার প্রক্রিয়া। সোমালিয়ার স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে ছোট উড়োজাহাজ থেকে তিন বস্তা ডলার পাওয়ার পর শুরু হয় মুক্তির চুড়ান্ত ক্ষণ গণনা। এর আগে জাহাজের ডেকে ২৩ নাবিককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়। হাত নেড়ে ২৩ নাবিকের জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর উড়োজাহাজ থেকে হলুদ বস্তায় ফেলা হয় ডলার।

তবে মুক্তিপণের অর্থ পেলেও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আরও ৮ ঘন্টা পর ভোর ৩ টায় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজ থেকে নেমে যায়। এরপর ইউরোপিয়ান নৌবাহিনীর দুই যুদ্ধজাহাজের পাহারায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এম ভি আব্দুল্লাহ।

১৪ বছর আগে জলদস্যুদের হাতে অপহৃত জাহাজ জাহান মণি উদ্ধারের অভিজ্ঞতা থাকায় এবার খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাহাজটি উদ্ধার করা গেছে বলে জানিয়েছে এর মালিকপক্ষ। আজ (রোববার, ১৪ এপ্রিল) দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয় আগামী ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দুবাইয়ে পৌঁছাবে এম ভি আব্দুল্লাহ। পরে নাবিকদের সাথে কথা বলে কীভাবে তারা দেশে ফিরবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এস আর শিপিংয়ের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রিফাত বলেন, 'এম ভি আব্দুল্লাহ গতকাল রাত ৩টা নাগাদ সোমালিয়া উপকূল থেকে রওয়ানা দিয়েছে। আশা করছি আগামী ১৯ তারিখ এটি সংযুক্ত আরত আমিরাতে যাবে।'

এদিকে মুক্তির পর এক ভিডিও বার্তায় নাবিকরা জানান, তারা সুস্থ আছেন। নাবিকদের মুক্তির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্বজনরা।

ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুর রশিদের ভাই বলেন, 'ওরা মুক্তি পেয়েছে এটা শুনে অনেক ভালো লেগেছে। ‌ওরা একটু স্বাভাবিক হলে কথা হবে।'

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) জলদস্যুদের সাথে জাহাজের মালিকপক্ষের মুক্তিপণ নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়। তবে এ বিষয়ে চুক্তি থাকায় মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে সেটি প্রকাশে অপরাগতা জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, 'আমার সাথে ওদের একটা চুক্তি হয়েছে। এটা গোপনীয় চুক্তি। এটা কারও সাথে শেয়ার করা যাবে না।'

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, মুক্তিপণের বিষয়ে কিছু জানে না সরকার। নাবিকদের দেশে ফেরাতে ১৫ বা ২০ দিন লেগে যেতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেগুলো শোনা যাচ্ছে এগুলো ঠিক না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপ ছিল। তারা আন্তরিকতার সাথে তৎপরতা করেছে। আন্তর্জাতিক চাপেই আলোচনার মাধ্যমে মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত হয়েছে নাবিকরা।'

গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতা বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। এর ১৪ বছর আগে এস আর শিপিংয়ের আরেকটি জাহাজ এম ভি জাজান মনি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সেবার জাহাজটি মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল।

এসএস