বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ মাত্র ১.৭ শতাংশ বাড়লেও, কাজের উপযোগী জনসংখ্যা বেড়েছে ১.৯ শতাংশ হারে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর ১ কোটি কর্মসংস্থানের বিপরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিসকা ওহনসর্গ বলেন, 'অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরে ব্যর্থ দক্ষিণ এশিয়া। বিপুল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো গেলে অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারতো। তবে বর্তমানে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার নিম্নমুখী।'
২০২৫ সালের ৩১শে মার্চ শেষ হওয়া অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৬.১ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির প্রভাব থাকবে বেশি। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ সময় ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি পর্যায়ে ব্যয় ও নির্মাণ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় কোভিড মহামারীর পর ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতে কর্মসংস্থানের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৩ সালে ভারতের অর্থনীতি আগের তুলনায় কিছুটা উজ্জীবিত। তবে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় দেশটিতে বেড়েছে বেকারত্ব।
প্রতিবেদনে বেশকিছু নীতিগত দুর্বলতা দূর করে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। উৎপাদনশীল সংস্থাগুলোকে শ্রমিক নিয়োগে উৎসাহিত করতে কিছু নীতির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, শ্রমবাজার ও ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত বিধি সংস্কার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। চায়না ডেভেলপমেন্ট ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, 'গত ২ দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ থেকে ৪ শতাংশে। এই নিম্নমুখ সূচক বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। এমন চলতে থাকলে আগামী দশকেই এই দেশগুলোর প্রতি ৪ জনে বেকার হবেন ৩ জন তরুণ।'
তিনি আরও বলেন, 'কাজের সুযোগ তৈরি না হওয়ায় ১০ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই দারিদ্রতায় প্রবেশ করেছে। সাথে বেড়েছে ঋণের মাত্রা।'
তবে এই সমস্যা নিরসনে বিশ্বব্যাংক নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। এসব দেশে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায় সংস্থাটি।'