চাকরির বাজার
0

যেভাবে তাদের জীবন পাল্টে গেলো

নওগাঁয় আবেদন ফি ১২০ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ৬৫ জন। বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে নওগাঁ পুলিশ লাইন্স মাঠে চাকুরিপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।

চা বিক্রেতার মেয়ে শ্রাবন্তী বানু। নওগাঁয় পুলিশ কনস্টেবলে নিয়োগ পরীক্ষা চূড়ান্ত হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চকতাতারু গ্রামের চা বিক্রেতা সাইফুল ইসলামের মেয়ে। নওগাঁ আদালত চত্বরে চা বিক্রি করে চলে তাদের সংসার।

অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তবে মেয়েকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্ন ছিলো পুলিশে চাকরি করানো। অবশেষে পরিবারের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকায় শ্রাবন্তীর নাম স্থান পায়। যখন নাম ঘোষণা হয় তখন রাত প্রায় ১টা। নাম ঘোষণার পর আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন শ্রাবন্তীসহ তার বাবা-মা। এক সময় আনন্দে কেঁদে দেন শ্রাবন্তী। শ্রাবন্তীরা দুই ভাইবোন। ছোট ভাই আরিফ নওগাঁ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণী অষ্টম পড়ছে।

অনুভূতি জানিয়ে শ্রাবন্তী বানু বলেন, 'ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিলো পুলিশে চাকরি করার। বান্ধবীদের কথায় পুলিশের নিয়োগে ১২০ টাকা খরচ করে আবেদন করেছিলাম। যে দোকান থেকে আবেদন করেছিলাম অনেকেই বলেছিল এসব নিয়োগে অনেক টাকা লাগে। এতে মন ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু তারপরও মনোবল হারায়নি। অবশেষে সব পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। না কারও সুপারিশের দরকার হয়েছে, না কোন টাকা লেগেছে। আমি কখনো ভাবতে পারিনি পুলিশ নিয়োগ পাবো। কিন্তু আল্লাহ সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন।'

শ্রাবন্তীর মতো অনেক দরিদ্র পরিবারের স্বপ্নবাজ ছেলে-মেয়েদের নাম এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে। যারা আসলে কল্পনা করতে পারেনি এতো সহজে পুলিশ নিয়োগ হবে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে এমনিতেই নানা অনিয়মের খবর মুখরোচক হিসেবে রয়েছে। তবে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হবে তা ছিলো কল্পনাতীত। অনেকের কাছে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে।

শ্রাবন্তীর মা বিথী বিবি বলেন, 'শ্বশুরের দেড় কাঠা জমিতে বসবাস করছি। এ সামান্য জমি ছাড়া আর কোন সম্পদ বলতে নেই। স্বামী চা দোকানি। তার আয় থেকে চলে সংসার। পাশাপাশি বাড়িতে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি লালন-পালন করা হয়। অনেক কষ্ট করে দুই ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করানো হচ্ছে। মেয়ের ইচ্ছে ছিল পুলিশে চাকরি করার আল্লাহ সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে।'

পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় ২ হাজার ২৩১ জন প্রার্থী। প্রথম ধাপে শারীরিক, দ্বিতীয় ধাপে দৌড়, পুশআপ, লং ও হাই জাম্প এবং তৃতীয় ধাপে দৌড়, ড্রাগিং ও রোপ ক্লাইম্বিং পরীক্ষা হয়। শেষে ৫৪৫ উত্তীর্ণ হয়।

গত ৬ মার্চ চতুর্থ ধাপে লিখিত পরীক্ষায় ২২০ জন উত্তীর্ণ হয়। যেখানে চূড়ান্ত ভাবে মৌখিক পরীক্ষায় ৬৫ জন নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৩৫ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১১ জন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ৩ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ৫ জন এবং আনসার কোটায় একজন ৫৫ জন পুরুষ রয়েছে। আর নারীদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৯ জন এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ১জনসহ ১০ জন।

সদর উপজেলা দুবলহাটি ইউনিয়ন শরিসপুর গ্রামের নাইমুর রহমান মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, 'প্রথমবার যখন দাঁড়িয়েছিলাম কিছু ভুলের কারণে বাদ পড়েছিলাম। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এবার দ্বিতীয় বার দাঁড়িয়ে মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছি। নিজের চেষ্টা ও যোগ্যতায় এবং আল্লাহ চাইছে বলেই বাংলাদেশ পুলিশে একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। মানুষ বিভিন্ন কথা বলে যে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না বা চাকরি হয়না। আমার কাছে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কোন টাকা ছাড়াই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে। টাকা লেগেছে বলতে মাত্র ১২০ টাকা যা আবেদন খরচ হয়েছে। সে জায়গা থেকে নিজেকে গর্বিত মনে হয়েছে।'

নওগাঁ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, 'নিয়োগে কিছু কিছু বিতর্ক থাকায় অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। সে জায়গা থেকে স্বচ্ছতার সহিত আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'যারা যোগ্যতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে কোনভাবেই কারও কাছ থেকে এক টাকাও নেয়ার সুযোগ নেই। আর যদি কেউ এ ধরনের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে এবং যদি অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'