শাস্তি কমাতে আবারও সংশোধন হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন। বুধবার (১৩ মার্চ) মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া নতুন আইনের খসড়ায় অন্তত ১২টি ধারায় শাস্তি কমানো হয়েছে। জামিনযোগ্য করা হয়েছে আগের আইনের অজামিনযোগ্য ধারাগুলোকে।
সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারায় বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে প্রাণহানি, কারিগরি নির্দেশনা না মেনে কিংবা নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা, ওভারলোড গাড়ি চালানোর মত অপরাধের কথা বলা আছে।
২০১৮ সালের আইনে এসব ধারা জামিনের অযোগ্য ছিল। নতুন আইনের খসড়ায় এর দুইটি ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাণহানি বাদে সড়কের যেকোন অপরাধে জামিন পাবেন চালক কিংবা সহকারীরা।
সড়ক পরিবহন আইন-২০২৪ এর খসড়ার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্তত ৬৯ থেকে ৭১, ৮০ থেকে ৯৮ এর মধ্যে অন্তত ১২টি ধারার সংশোধন করা হয়েছে। এসব সংশোধন মূলত শাস্তি কমানোর। বিশেষ করে এসব ধারায় আর্থিক জরিমানা কমানো হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
যেমন, নতুন আইনের ৬৯ ধারায় বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে যেখানে ৩ মাসের জেল এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিল। সেখানে, অর্থদণ্ড কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া নতুন আইনের এ খসড়ার ব্যাপারে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদেরই স্বার্থ বেশি দেখা হয়েছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম হাদিউজ্জামান বলেন, 'আমাদের সড়ক পরিবহন আইন অনেকটা হোচট খেয়ে গেল। এটা আবার প্রমাণিত হয়ে গেলো যে আমাদের পরিবহন খাতে যে বিশাল সিন্ডিকেট আছে তাদের কাছে আমরা সবাই অসহায়। ফলে এই যে যুগোপযোগী এবং আধুনিক একটি আইন তৈরি করা হলো এ আইন এখন অনেকটাই খোঁড়া হয়ে গেল। কারণ অনেক ধারায় অনেক ক্ষেত্রেই শিথিলতা রয়েছে।'
এই খসড়া নিয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে আরও জানান, পরিবেশ দূষণ, ট্রাফিক আইন না মানা, মোটরযান বিমার ধারাগুলোও পরিবর্তন হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে আসলে কী বার্তা দিচ্ছে সরকার, এ প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, 'আমাকে যদি এমন প্রশ্ন করেন তার উত্তর তো আমি দিতে পারবো না। এখানে আমার রোলটা আপনাদের বুঝতে হবে। আজকে কেবিনেট আলোচনা হয়েছে, সে আলোচনা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত ব্যখ্যা জানতে চাইলে যে মন্ত্রণালয় বিষয়টি উপস্থাপন করেছে তাদের সাথে গিয়ে কথা বলে ব্যখ্যা নিতে পারেন।'
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এই আইনে কতটা জনবান্ধব আর কতটা পরিবহন মালিক শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করে এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই আরেক দফা সাজা কমিয়ে সংশোধন করা আইনের খসড়া পাস হলো মন্ত্রিসভায়।