২০১৩ সাল থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। ২০২১ সাল থেকে তাকে জেলে ঢুকিয়ে রাখে পুতিন সরকার। উগ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থায়নের অভিযোগে গত আগস্টে তাকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত।
মৃত্যুর আগের দিন আদালতের শুনানিতে নাভালনিকে কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছিল। তবে ভিডিও বার্তায় তিনি হাসিমুখে কৌতুক করে সবার সঙ্গে কথা বলেন। কারা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, কারাগারে নাভালনি হাঁটার পর হুট করে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নাভালনির আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক সবাই। অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউরোপের কয়েকটি দেশে আন্দোলনে নেমেছে নাভালনির সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ পুতিন তাদের নেতাকে হত্যা করেছে। এক সমর্থক বলেন, 'রাশিয়াকে একটি উন্নত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারতেন নাভালনি। আমরা এই ভবিষ্যৎ চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।'
আরেকজন জানান, 'বিশ্বের অনেক মানুষ রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পুতিন সরকারকে একদিন আইনের আওতায় আসতে হবে।'
নাভালনির মৃত্যুর জন্য পুতিনকে জবাবদিহি করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, 'নির্বাসিত জীবন ছেড়ে কারাভোগ ও মৃত্যুভয়ের পরও দেশের জন্য রাশিয়ায় ফিরে এসেছিলেন নাভালনি। তার মৃত্যু রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব গল্প বলবে। তবে কেউ ভুল বুঝবেন না। নাভালনির মৃত্যুর জন্য একমাত্র পুতিন দায়ী।'
এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, নাভালনির মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসক ও কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে নাভালনির স্ত্রী বলছেন, তিনি পুতিন এবং রুশ সরকারকে বিশ্বাস করেন না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
কীভাবে নাভালনির মৃত্যু হলো তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নাভালনিও হয়ত পুতিনের অন্য শত্রুদের মতোই রহস্যময় পরিণতি বরণ করেছেন।
এর আগে ২০১৭ সালে আন্দোলনে আততায়ীর ছোড়া রাসায়নিক গ্যাসে তার একটি চোখের ৮০ ভাগ দৃষ্টিশক্তি হারায়। ২০২০ সালে তাকে বিষপ্রয়োগের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। বছরের পর বছর সরকারের তরফ থেকে হয়রানি, হুমকি ও অত্যাচার সহ্য করে রুশ জনগণের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পান নাভালনি।