কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
অর্থনীতি
0

শর্তের বেড়াজালে ব্যাংকঋণ থেকে বঞ্চিত কৃষক

উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই

কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত ৪ শতাংশ হারে ঋণ প্রান্তিক কৃষকদের পাওয়ার কথা। কিন্তু মাঠ পর্য়ায়ে সে চিত্র ভিন্ন। নাটোরের বেশিরভাগ কৃষকের অভিযোগ হয়রানিসহ নানা শর্তের বেড়াজালে ব্যাংক থেকে ঋণ বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

নাটোর সদর উপজেলার শিবদুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী। চারবিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে গিয়ে সব সঞ্চয় শেষ হয়েছে। এখন শূন্য হাতে পরিচর্যাসহ ফসল ঘরে তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তায় তিনি। কিন্তু কৃষির উৎপাদন থেকে বিপননে ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা থাকার পরেও তার দুশ্চিন্তা রয়েছে।

লিয়াকত আলী বলেন, '২০ হাজার টাকা ঋণ নিতে গেলে ১০ শতাংশ জমির দলিল চায়। আমরা যারা বর্গাচাষি আমাদের তো জমি নাই। তাই আমরা ঋণ পাই না।'

লিয়াকত আলীর মতো জেলার বেশিরভাগ কৃষকের একই গল্প। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকের জটিল নানা শর্তে ঋণ পাওয়া থেকে তারা বঞ্চিত। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছেন তারা।

কৃষকরা বলেন, 'বেশিরভাগ মানুষ এনজিও থেকেই ঋণ নিতেছে। ঠেকাত পড়ে গেলে এসব সমিতি থাইকা টাকা উঠাই। জায়গা বন্দক রাইখা ঋণ নিলে সেইটা দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের নাই।'  

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী নাটোরে প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৪ জন। আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে আগ্রহী করতে প্রতিবছর ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে সরকার। তবে এই সুবিধার কতটুকু প্রান্তিক কৃষকরা পাচ্ছেন!

জেলা সমাজতান্ত্রিক খেত-মজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সদস্য দেবাশীষ রায় বলেন, 'খাতা-কলমে বরাদ্দ কৃষি ঋণটা ক্ষুদ্র চাষিরা পায় না। কৃষকদের খাদ্য উৎপাদন, ঋণ, মহাজনের লোনগুলো দেখলেই আমরা বুঝতে পারি যে কৃষকরা কতটুকু ঋণের জ্বালায় জর্জরিত হচ্ছে, এই সরকারি সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ার কারণে।'

উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলা নাটোরে ২৭টি ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এরপরেও ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার অভিযোগ প্রান্তিক কৃষকদের। তবে নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি ঋণ দেয়া হচ্ছে বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।

নাটোর জনতা ব্যাংকের ডিজিএম সফিকুর রহমান বলেন, 'নীতিমালার মধ্যে থেকে আমরা ঋণগুলো বিতরণ করি। যেসব কৃষক ঋণ পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে ঋণ দেই এবং আমরা শতভাগ বিতরণ করার চেষ্টা করি।'