অর্থনীতি , পরিষেবা
দেশে এখন
0

সড়ক-রেলের দ্রুততায় আকাশপথে যাত্রী কমেছে

দেশের সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ দ্রুতগতির হওয়ায় আকাশপথে যাত্রী চলাচল কমেছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক রুটে চোখ দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-যশোর রুটে। দুটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার ঢাকা-বরিশাল রুটের ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে সপ্তাহে ৩টি ফ্লইট চালু রেখেছে বিমান।

ঢাকা-যশোর রুট পুরোপুরি বন্ধ না হলেও ফ্লাইট সংখ্যা এখন অর্ধেকের নিচে। আগে তিনটি এয়ারলাইন্সের ১৪ টি ফ্লাইট চললেও এখন চলে মাত্র ৫টি।

বরিশাল-যশোর রুটের পর এবার ঢাকা-কক্সবাজার রুটেও যাত্রী কমার শঙ্কা। যদিও এয়ারলাইন্সগুলো মনে করছে এই রুটে ১০ শতাংশের বেশি যাত্রী কমার সম্ভাবনা আপাতত নেই।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, 'সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন (সড়ক ও রেলপথ) ঘটেছে ঠিকই তবে মানুষকে কিন্তু ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হবে। যারা বিমানের যাত্রী তারা কিন্তু লম্বা সময় ভ্রমণ না করার জন্যই মূলত বিমানে ভ্রমণ করছে। তবে সেই জায়গা থেকে ব্যবসা খুব বেশি কমার সুযোগ নেই।'

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক যাত্রী চলাচল বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি

এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুট নিয়ে বিমান পরিকল্পনা সাজিয়েছে। দেশের রাষ্ট্রীয় এই বিমান সংস্থাটির এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপেও নজর রয়েছে। মার্চেই ঢাকা-রোম ও ঢাকা-কুনমিং সরাসরি ফ্লাইট চালুর আভাস মিলেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম বলেন, 'আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য কুনমিং-এ ফ্লাইট চালু করার। চট্টগ্রামের সাথে কুনমিং এর যোগাযোগটা খুবই সহজ। এটি আমাদের আগেও ছিল। আশা করছি মাস তিনেকের মধ্যে শুরু করবো।'

ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে জেদ্দা, মদিনা, আবুধাবি, দুবাই, দোহাসহ বেশ কয়েকটি রুটে বিমান ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। এছাড়া দেশের বৃহত্তম বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সও আন্তর্জাতিক রুট বাড়াচ্ছে।

গেল বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পর এ বছরে ঢাকা দিল্লী, ঢাকা জেদ্দা, ঢাকা রিয়াদ তাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি ইউরোপকেও এয়ারলাইন্সটি নজরে রাখছে। সেজন্য ৪৩৬ আসনের এয়ারবাসের A-330 মডেলের দুটি উড়োজাহাজ তাদের বহরে মার্চেই যুক্ত হবে।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম আরও বলেন, 'গত দশবছরে আমরা ৯টা দেশে ১১টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছি। আমরা দিল্লী এবং জেদ্দা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছি। জেদ্দার জন্য বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর বাইরে যেয়ে যাত্রীদের সুবিধার জন্য A-330 মডেলের এয়ারবাস যোগ করার পরিকল্পনা করছি।'

২০২৪ এর প্রথমার্ধ্বে একটি মাত্র আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালানো নভোএয়ারও বাড়াতে চায় গন্তব্য। শুরু করতে চায় ঢাকা থেকে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, দুবাই, শারজাহ ও মাস্কাট এই ছয়টি রুট। এয়ারলাইন্সটি নতুন রুটের জন্য এয়ারবাসের A-321 মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করেছে।

নভোএয়ারের হেড আব মার্কেটিং মেজবাউল ইসলাম বলেন, 'আমরা একটু দৃঢ়ভাবে এগুচ্ছি। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করেই যেন আমরা লাভজনক আন্তর্জাতিক অপারেশন চালু করতে পারি। আপনারা নিকট ভবিষ্যতে নভোএয়ারের বিস্তৃতি দেখতে পাবেন।'

নভোএয়ারে আর্ন্তজাতিক রুটের জন্য যুক্ত হচ্ছে ৩টি বিমান

বছরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক যাত্রার পরিকল্পনা দেশের নবীন এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যাস্ট্রা'র। এক বছর অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালানোর শর্ত পূরণ করে এবার তারা বেবিচকের কাছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ছাড়পত্র চেয়েছে। সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখে আরও দুটি এটিআর যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে এয়ারলাইন্সটি। আন্তর্জাতিক যাত্রা ভারত দিয়ে শুরু করতে চায়।

এয়ার অ্যাস্ট্রা'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বলেন, 'সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছি। এক বছরের যে অভ্যন্তরীণ রুট পরিচালনার নিয়ম সেটার পূর্তি হয়ে গেছে। এখন আমরা আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনা করতে চাই। এই মর্মে চিঠিও দিয়েছি। আশা করছি ২০২৪ সালের প্রথমেই বেশ কয়েকটা আন্তর্জতিক রুটে সেবা দিতে পারবো।'

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ব্যবহার শুরু হলে চাপে পড়বে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এয়ারলাইন্সগুলোকে নীতি সহযোগিতা দিতে হবে বলে মনে করেন অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) নজরুল ইসলাম।