মুদ্রাবাজার
অর্থনীতি
0

নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা বুধবার

বর্তমানে দেশের অর্থনীতির মূল সংকটই হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ডলার সংকটের কারণে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। চলতি অর্থবছরের শেষ ৬ মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুনের জন্য, বুধবার (১৭ জানুয়ারি) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানিসহ অধিকাংশ দেশ মূল্যস্ফীতির গহ্বর থেকে উঠে আসতে পারলেও ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে আবার কমেছে কিন্তু কমেনি দেশের বাজারে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

নতুন সরকার গঠনের পর চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন অর্থাৎ শেষ ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি আসছে। আগের বছরে মতই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির খসড়া তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খসড়া মুদ্রানীতিতে এবারও নীতি সুদের হার আরও বাড়িয়ে টাকাকে অতিমূল্যায়িত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে সুদহার বেড়ে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। বাকি সব চলবে আগের মতোই।

গত নভেম্বরের শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের হার কিছুটা বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নীতি সুদের হারও বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এদিকে তারল্য সংকট ও সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ নেমেছে তলানিতে।

আর্থিক নানা সংকটের মাঝে প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, পর্যাপ্ত তারল্য না থাকা, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত। আর এসব সমস্যার মধ্যেই ঘোষিত হচ্ছে নতুন মুদ্রানীতি। নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কৃত্রিমভাবে সংকট সমাধানের চেষ্টা না করে বাজারমুখী হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

কোম্পানি আইন ও অর্থনীতি বিশ্লেষক এ এম মাসুম বলেন, 'রিজার্ভ বা অন্যান্য দিকগুলোতে মনে হয় যে তারা ইতিমধ্যেই ভালো পরিকল্পনায় আছে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। তবে তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মুদ্রাস্ফীতিকে ৬ শতাংশে নিয়ে আসা। সেইসাথে এক্সচেঞ্জ রেটটা স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসাও চ্যালেঞ্জ হবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আর্থিক খাত সংস্কারে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে সরকারকে। নতুন মুদ্রানীতিতে সুদের হারের পাশাপাশি পণ্যের সরবরাহ বাড়াতেও নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, 'মুদ্রানীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে বেসরকারি খাতে যেন ক্রেডিট ফ্লো যায়। বড় শিল্পগুলোকে প্রাধান্য না দিয়ে ছোট-মাঝারি শিল্প ও কর্মসংস্থান তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং পণ্যের উৎপাদন করা শিল্পগুলোতে প্রাধান্য দিয়ে সেখানে ক্রেডিট সাপ্লাই বাড়াতে হবে।'

মুদ্রানীতি দিয়েই মূল্যস্ফীতিকে সামাল দেয়া সম্ভব। মূল্যস্ফীতিকে সামাল দিলে ডলারের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। বলেন, 'মূল্যস্ফীতিকে মুদ্রানীতি দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। শুরু তো আমাদের হয়েছেই গত ২-৩ মাসে। এখন পলিসি রেটকে আগামী ৬ মাস বাড়িয়ে যেতে হবে এবং সেটাকে বাজার ভিত্তিক করেই করতে হবে। যখন মূল্যস্ফীতি কমা শুরু করবে তখন এটাকে আস্তে আস্তে থামিয়ে দিতে হবে।'

বাজারের মুদ্রার সরবরাহ কেমন হবে মূলত সেটি ঠিক করে মুদ্রানীতি। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় মুদ্রানীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল অস্ত্র। তাই সংকট কাটাতে সবাই তাকিয়ে আছে নতুন মুদ্রানীতির দিকে।