দেশে এখন
0

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখ থেকে গুড়ের উৎপাদন কমছে

শীতে পিঠা-পুলির সঙ্গে তরল গুড় স্বাদে আনে ভিন্নতা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে প্রতি মৌসুমে আখের রস থেকে তৈরি হয় মুখরোচক এই গুড়।

স্থানীয়ভাবে যা লালী নামে পরিচিত, এবার প্রায় ২ কোটি টাকার লালী কেনাবেচা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি আর আখ চাষ কমে যাওয়ায় লালী গুড়ের উৎপাদনও কমছে।

ঘানি টানছে মহিষ, মাড়াই হচ্ছে আখ। আর শব্দে রস জমা হচ্ছে হাড়িতে। প্রতি বছর শীতে এ দৃশ্যের দেখা মেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে। আখ থেকে রস সংগ্রহের পর ছেঁকে তা কয়েক ঘণ্টা জাল দিয়েই তৈরি হয় মুখরোচক লালী গুড়।

স্বাদ বাড়াতে ভাপা, ম্যারা ও চিতইসহ বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে অনেকেই এই গুড় ব্যবহার করেন। কেউ আবার মুড়ি সঙ্গেও খায়। বংশপরম্পরায় বাণিজ্যিকভাবে সুস্বাদু লালী উৎপাদন করছে বিজয়নগরের বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ১০টির বেশি পরিবার। যদিও কয়েক বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল অর্ধশত।

প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে লালী তৈরির কাজ। আর এই কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় অনেক নারী-পুরুষের। মূলত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে লালী তৈরি ও বেচাকেনা। উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে এবং আখের রস ও তরল গুড় কিনতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় করেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।

ক্রেতারা বলেন, ‘শীতে এই গুড়ের চাহিদা আছে। সবাই পিঠা-পুলির সঙ্গে খায়। এই গুড় ব্যবহার করলে পিঠার স্বাদ বেড়ে যায়।’

প্রতি কেজি লালী ১৫০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে আখের রস খাওয়ার পাশাপাশি এই গুড় নিয়ে যান।

তবে উৎপাদন খরচ বাড়ায় এবং কৃষকরা আখের বদলে অন্যান্য মৌসুমী ফল চাষে ঝুঁকে পড়ায় লালী উৎপান কমে যাচ্ছে। ফলে এবার দাম কিছুটা বেশি বলে জানন উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা।

রস থেকে লালী তৈরির পাশাপাশি আখের ছোবড়া জ্বালানি হিসেবে বিক্রি হয়। ভোক্তারা যেন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত লালী পান সেটি নিশ্চিতে উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়মিত তদারকি করেন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘লালী গুড় উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।’

উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে আগামী মৌসুম থেকে কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের আখ চাষে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা।

চলতি মৌসুমে বিজয়নগরে ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করেছেন কৃষকরা। এ আখ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার লালী বা তরল গুড় উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।