দেশে এখন , মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ
কৃষি

খাবার-ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে চাঁদপুরে বন্ধ ৭০৮ খামার

চাঁদপুরে খাবার ও ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে সংকট দেখা দিয়েছে পোল্ট্রি ও গরুর খামারে। পুঁজি সংকটে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৭০৮টি খামার। এতে বেকার হয়ে পড়েছে এই শিল্পে জড়িত অনেক শ্রমিক।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হাসাদী গ্রামের যুবক মাহফুজুর রহমান। খামারে নিয়ম করে সকাল-বিকেল যত্ন নিচ্ছেন মুরগির। এতে মাস শেষে বেতন মেলে ১২ হাজার টাকা। অথচ দুই বছর আগেও তিনি নিজেই ছিলেন একজন খামারী।

প্রায় এক যুগ আগে সাড়ে ৬ লাখ টাকা পুঁজিতে শুরু করেন খামার। ক্রমাগত লোকসানে হারান সেই পুঁজি। সবশেষ ২০২১ সালে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে ১৬শ' মুরগি তোলেন খামারে। কিন্তু মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধের দাম বৃদ্ধিসহ ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আবারও লোকসানে পড়েন এই খামারি। এরপরই বাধ্য হন খামার বন্ধ করে দিতে।

ভুক্তভোগী খামারি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখন অন্যের খামারে কাজ করি, এখানের বেতন দিয়ে আগের ঋণ দেয়ার চেষ্টা করছি।’

এদিকে খেরুদিয়া এলাকার গরু খামারি মিনহাজ পাটোয়ারী। গত ১০ বছরের বেশি সময় চালাচ্ছেন গরুর খামার। কিন্তু গো খাদ্যের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে লাভের অংক। বাধ্য হয়ে খামারে কমিয়েছেন গরুর সংখ্যা।

তিনি বলেন, ‘এখন সবকিছুর দাম বেশি। ভুসির দাম ৫০-৬০ টাকা। আগে যেখানে ১০/১২টা গুরু পালন করতাম এখন সেখানে ৪/৫টা পালন করছি।’

মাহফুজ কিংবা মিনহাজ নয়। এমন করুণ চিত্র জেলার শত শত পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খামারীর। পোল্ট্রি ও গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি অপরদিকে, বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। খামার পুনরায় চালু করতে তারা চান সরকারি সহায়তা।

খামারিরা বলেন, ‘এক কেজির একটি মুরগি বড় করতে খরচ হয় ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। কিন্তু এই মুরগিটা বিক্রি করতে গলে দাম পাওয়া যায় ১৩০/১৩৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বারই লোকসান হয়। যদি বাচ্চার দাম, খাবার ও ওষুধের দাম কমানো হতো তাহলে যেসব খামার বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব খামার আবার চালু হতো।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, চাঁদপুরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত গরুর খামার ৫ হাজার ৮৮৪টি। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩২৬টি খামার। আর ২ হাজার ১২২টি পোল্ট্রি খামারের মধ্যে বন্ধ হয়েছে ২২২টি খামার।

এছাড়া ছাগল, হাঁস, টার্কি, কবুতরসহ জেলায় অন্যান্য খামার রয়েছে ৯ হাজার ৫১৫টি। এরমধ্যে বন্ধ হয়েছে ৭০৮টি। এতে বেকার হয়েছেন ২ হাজারের বেশি মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা নিবন্ধনের মাধ্যমে ব্যাংকে আবেদন করলে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক।

জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দুধের লক্ষ্যমাত্রা ২ দশমিক শুন্য এক লাখ টন, মাংস ১ দশমিক একদুই টন এবং ডিমের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩১ দশমিক এক শুন্য কোটি পিস। তবে খামারের সংখ্যা কমায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে রয়েছে সংশয়।

এমএসএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর