একদিনে ৮ ট্রাক চাল বাতিল করে ফেরত দেয়া হয়েছে। পরিদর্শকদের চোখ ফাঁকি দিতে পারলে, এর ভুক্তভোগী হতে পারেন অল্প দামে চাল কেনা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফলভোগী সাধারণ মানুষ।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রায় সকল সরকারি খাদ্য গুদামে সংগৃহীত চাল সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হয় বগুড়ার সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারে। গুদামের সামনে অপেক্ষায় চাল ভর্তি বেশ কয়েকটি ট্রাক। সবুজ সংকেত পেলেই চাল খালাস করে চলে যাবে ট্রাকগুলো।
এখন টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধরা পড়লো অন্যরকম দৃশ্য। নমুনা সংগ্রহের পর খাদ্য পরিদর্শকরা জানালেন, নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি আর্দ্রতা, মরা, অপুষ্ট ও ভাঙ্গা দানা মিশ্রিত এসব চাল সংরক্ষণাগারে রাখার অনুপযোগী।
বগুড়ার সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের শেখ মো. জাকারিয়া হাসান বলেন, ‘চাল সংরক্ষণে যে নির্দেশ রয়েছে সেখানে থ্রিডির নির্ধারিত মাত্রা পয়েন্ট ফাইভ। কিন্তু এখানে পয়েন্ট ফাইভের বেশি রয়েছে। এজন্য চালটা নেয়া যাবে না।’
সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের খাদ্য পরিদর্শক খান মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে চাল যেতে আট থেকে নয় মাস সময় লাগবে। এ চাল এখানে রাখা হলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে এবং ওজন অনেক কমে যাবে।’
শতকরা সর্বোচ্চ ১৪ ভাগ আর্দ্রতা আর দেড় ভাগের বেশি থ্রিডি থাকায় ৮টি ট্রাকের সবগুলো চাল বাতিল করে ফেরত পাঠান সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থাপক।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া খাদ্য গুদাম থেকে পাঠানো এসব চালে কোন অনিয়ম নেই বলে এখন টেলিভিশনকে মোবাইলে জানান গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম পারভেজ।
ফোনকলে গাইবান্ধার বোনারপাড়া খাদ্য গুদামের এই কর্মকর্তা, ‘আমার চালগুলো ওখানে আছে, আপনারা দেখতে পারেন। আমি যে চালগুলো পাঠিয়েছি এগুলো কোনোদিক থেকে খারাপ হওয়ার কথা না।’
খাদ্য গুদাম থেকে কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগারে নিয়ে আসা চাল আবার ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়, অর্থের অপচয় হয় জানালেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, খাদ্যগুদাম সংশ্লিষ্টরা কৌশলে ভেজাল চাল সংরক্ষণাগারে নেয়ার চেষ্টা করেন।
খাদ্য গুদাম থেকে চাল পাঠানোর আগে সেখানে আর্দ্রতা ও থ্রিডি পরীক্ষা করে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা ঠিকঠাক মানা হয় না বলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়- জানালেন সংরক্ষণাগারের এই কর্মকর্তা।
সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষাণাগারের ব্যবস্থাপক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনিচ্ছাকৃত এমন ভুল এক দুইটা হতে পারে। ইচ্ছাকৃত তো আছেই। এটা অপরাধের মধ্যে পড়ে।’
চলতি বছরের জুন থেকে ১৯ আগষ্ট পর্যন্ত এই সংরক্ষণাগারে ৪৩ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন চাল রাখা হয়েছে। একই সময়ে নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদাম থেকে পাঠানো ৪২টি ট্রাকের ৮৪০ টন চাল বাতিল করে তা ফেরত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।