শেরপুর সদরের টালিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া। লাভবান হওয়ায় গতবছর বাড়ির পতিত জমিতে চাষ করেছিলেন তুলার। এখন চলছে তুলা সংগ্রহের কাজ। চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম থাকায় তুলার ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে তুলা চাষে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। দেশি তুলাতে বিঘাপ্রতি ১২ মণ এবং হাইব্রিড ১৫ মণ ফলন পাওয়া যায়। যেখানে প্রতি মন তুলা বিক্রয় হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় মিল মালিকরা সরাসরি তুলা চাষীদের খেত থেকে তুলা ক্রয় করছে। অর্থাৎ এক বিঘা জমিতে দেশি তুলা চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও ৩০ হাজার টাকা এবং হাইব্রিড জাতের তুলায় ৪০ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকছে কৃষকের।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে শেরপুরে ৫শ জন চাষি ২১৫ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন, যা গতবারের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। এ বছর উচ্চফলনশীল জাত হোয়াইট গোল্ড-১, হোয়াইট গোল্ড-২, সিবি- ১২, সিবি- ১৪, রুপালী-১ ও শুভ্র জাতের তুলা বেশি চাষ হয়েছে । চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম চড়া হওয়ায় দেশের বাজারেও বেড়েছে পণ্যটির দাম। এর ফলে কৃষকেরা এখন নগদ মূল্যে তুলা বিক্রি করতে পারছেন। তাই বাম্পার ফলন ও ভালো দামে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
উৎপাদন খরচ কম ও তিন গুন লাভ হওয়ায় নিজের জমি বা অন্যের জমি লীজ নিয়ে তুলা চাষ করে লাভবান হচ্ছি আমরা। তুলা আমাদের কাছে সাদা সোনা। তাই সরকারি প্রণোদনা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় তুলা চাষে দিন দিন আমাদের আগ্রহ বাড়ছে।
অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচে তুলা চাষে অধিক লাভ এবং চাষ পরবর্তী অন্য ফসলের ভাল ফলনে শেরপুরে তুলা চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
শেরপুর সদর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে তুলা অনেক ভালো হয় তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আমরা উপসহকারী কৃষি অফিসাররা মাঠের কৃষকদের সব সময় বিভিন্ন সমস্যার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছি।’
কৃষকেরা যাতে উৎপাদিত তুলার ন্যায্যমূল্য পান সে জন্য দাম বাড়িয়েছে সরকার। শেরপুরে জেলার অধিকাংশ জমি তুলা চাষের উপযোগী। কেউ তুলা চাষ করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি। আগামীতে অন্যান্য ফসলের মতো তুলা চাষের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তুলা উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
শেরপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ড স্টোর কাম ফিল্ড অফিসার শাবনাজ আক্তার বলেন, ‘ এখানে প্রায় ৫শ তুলা চাষি আছে। এখানে আমরা কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি তুলা চাষিদের এছাড়া তুলা দেশের সর্বত্র পৌঁছে দিয়ে থাকি।’
২০১৫ সালে শেরপুরে ১ম বারের মত তুলা চাষ শুরু হয়। সেবছর চাষীরা সিবি-১২ ও রুপালী-১ জাতের তুলা চাষ করেছিলেন। পরবর্তী ভালো ফলন ও লাভবান হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।