খাদ্য ও আবাসস্থল সংকটে বিলুপ্তির পথে মেছোবিড়াল

এখন জনপদে
0

প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংস জলাশয় ভরাটের ফলে নেত্রকোণায় কমছে মেছো বিড়ালের সংখ্যা। এক সময় হাওরসহ জেলার সবখানেই এর দেখা মিললেও খাদ্য ও আবাসস্থল সংকটে বর্তমানে বিলুপ্তির পথে প্রাণীটির। স্থানীয়রা বলছেন, বন-জঙ্গল কমে আসায় হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। এ অবস্থায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস’।

পাহাড় নদী ও হাওর বিস্তৃত জেলার নেত্রকোণা। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এ জেলার বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিচরণ থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়েছে অনেক প্রাণী।

এই যেমন মেছোবিড়াল। বাঘের মতো গড়ন আর গায়ে কালো ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকায় অনেকেই চিতা কিংবা বাঘ বলেও ভুল করেন। একসময় নেত্রকোণার প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীর দেখা মিললেও খাদ্যে সন্ধানে লোকালয়ে আসলেই মানুষের রোষানলে হারাতে হয় প্রাণ

পাহাড়ি সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে একসময় মেছো বিড়ালের অবাধ বিচরণ থাকলেও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা বাড়ায় কমেছে প্রাণীটির অস্তিত্ব। একইভাবে পূর্বধলার রাজধলা বিলের চারপাশে বন জঙ্গল উজাড় করে বসতভিটা তৈরি করায় বিলীন হয়েছে আবাসস্থল। এছাড়া খাবারের অভাবে হাঁস-মুরগির খামারে চলে আসায় বা লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় হত্যার শিকার হতে হয়।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন বিভিন্ন সময় মাছের খামার কিংবা মুরগির খামারে পাতা ফাঁদে ধরার পর হত্যা করা হয় প্রাণীগুলো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণীকে সংরক্ষণের পাশাপাশি করতে হবে সচেতনতা ও পরিকল্পিত বনায়ন।

সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সহ-সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক সুমন বলেন, ‘ভারসাম্য বজায় রাখতে এই প্রাণীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই প্রাণীকে কেউ যেন না মারে সকলের কাছে এই বার্তা আমরা পৌঁছে দিতে চাই।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিকের পরিবেশ কর্মী ও সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান বলেন, ‘মেছোবাঘ বলে যখন ডাকে তখন মানুষের মধ্যে আরো বেশি আক্রমণ করার মানসিকতা তৈরি হয়। এভাবে আমাদের মেছোবিড়াল প্রকৃতির বন্ধু ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এদের সংরক্ষণের একটা পথ হতে পারে মানুষের ভিতরে সচেতনতা তৈরি করা।’

এদিকে, মৎস‌্যভোজী এ প্রাণীটিকে রক্ষায় দেশে প্রথমবারের মতো ১লা ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মেছোবিড়াল দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জীববৈচিত্র রক্ষায় বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির অস্তিত্ব রক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানি বিশ্বাস বলেন, ‘জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের মেছো বিড়ালকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সবাই মিলে আমরা এই বিরল প্রজাতির হারিয়ে যেতে বসা মেছো বিড়ালকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।’

একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি সংবাদ পর্যালোচনায় ১৬১টি মৃত মেছো বিড়ালের সন্ধান পাওয়া যায়। আর ৮৩ শতাংশ সংবাদে মেছো বিড়ালকে কখনো বাঘ কখনো বা চিতা বাঘ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

এএম