মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় গত ১২ মার্চ। শেষ হয় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের এক সোনালী যুগের।
২০০১ সালে মাশরাফিকে দিয়ে শুরু। এরপর মুশফিক, তামিম, সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহর লাল সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানো। দেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে যা বিশেষ সময়কাল।
১৯৯৯ বিশ্বকাপের সাফল্যের পর দীর্ঘদিন জয়খরা দেশের ক্রিকেটে। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়। বিশ্ব ক্রিকেটে ভয়ডরহীন তিন ক্রিকেটারের আগমনী বার্তা। সাকিব, তামিম, মুশফিক তখন বাংলাদেশের নিউ ব্র্যান্ড।
বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। ৮৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ৫০টিতে জয়ের মুখ দেখেছেন ক্যাপ্টেন ম্যাশ। মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিক দেশের সেরা ব্যাটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বমহিমায়। ২৭৪ ওয়ানডেতে করেছেন ৭ হাজার ৭৯৫ রান। সেঞ্চুরি ৯টি আর হাফ সেঞ্চুরি ৪৯টি। ২৪৩ ক্যাচের পাশাপাশি স্ট্যাম্পিং করেছেন ৫৬টি।
দেশের সেরা ওপেনার হিসেবে অনন্য তামিম। ২৪৩ ম্যাচে তামিমের রান ৮ হাজার ৩৫৭। ১৪ সেঞ্চুরির পাশে আছে ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে এক যুগের ও বেশি সময় বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের জাত চিনিয়েছেন সাকিব। বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনেকটাই নির্বাসিত তিনি। ২৪৭ ওয়ানডেতে সাকিবের রান ৭ হাজার ৫৭০, সেঞ্চুরি ৯টি, অর্ধশতক ৫৬টি।
সবশেষ বিপক্ষ দলের জন্য সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ে সাদা বলের ক্রিকেট থেকে শেষ হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক বর্ণিল অধ্যায়। ২৩৯ ওডিআই ক্যারিয়ারে ৫ হাজার ৬৮৯ রানের পাশাপাশি রিয়াদের আছে ৮২ উইকেট, ৪টি সেঞ্চুরি ও ৩২টি হাফ সেঞ্চুরি।
পাঁচ ক্রিকেটার বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের অর্জন, দেশের প্রতি তাদের নিবেদন ১৮ কোটি বাংলাদেশীর মণিকোঠায় থাকবে দীর্ঘসময়।
টি-টোয়েন্টিতে রানের বিচারে সবচেয়ে বেশি অবদান সাকিব আল হাসানের। ১২৯ ম্যাচে ৩,১৭৭ রান তার। বল হাতে নিয়েছেন ১৪৯ উইকেট। বিশ্ব ক্রিকেটে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়া মাহমুদউল্লাহর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার কীর্তিও সাকিবের।
দ্বিতীয় অবস্থানে মাহমুদউল্লাহ। ১৩৯ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর রান ২৩৯৫। সর্বোচ্চ ৭৪টি ছক্কাও তার। তালিকায় ৪র্থ স্থানে তামিম। টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচ খেলে তামিম ইকবালের রান ১৭০১। এই ফরম্যাটে দেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও খান সাহেব।
তালিকায় চার নম্বরে মুশফিকুর রহিমের অবস্থান। ১০২ ম্যাচে মুশফিকের রান ১৫০০। কিপার হিসেবে ৪২ ক্যাচের পাশাপাশি আছে ৩০টি স্ট্যাম্পিং। মাশরাফি বিন মুর্তজা এই ফরম্যাটে ৫৪ ম্যাচে ৩৯ ইনিংস ব্যাট করে করেছেন ৩৭৭ রান। বল হাতে নিয়েছেন ৪২ উইকেট।
দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যা কিছু অর্জন তার মূলে এই পাঁচ তারকা ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঐতিহাসিক জয় দিয়ে উত্থানের শুরু, তার সর্বশেষ সম্মিলিত উল্লাস ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেশের ক্রিকেটেও লেগেছে পালা বদলের হাওয়া। শান্ত- মিরাজদের হাত ধরে দেশের ক্রিকেটে আসবে নতুন সাফল্য রচিত হবে নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশ ক্রিকেট তোমাদের কখনো ভুলবেনা।